রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

‘বায়োমেন্ড রেঞ্চ’ – নিরাপদ ও সুস্থ-সবল গরুর ব্যাতিক্রমধর্মী এক খামার

মো. খোরশেদ আলম (জুয়েল) : আয় বাড়ার সাথে সাথে দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়টি মানুষের মধ্যে দিনকে দিন বাড়ছে। নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে মানুষ সতর্ক হচ্ছেন, প্রশ্ন তুলছেন। আমি নিজেও আমার পরিবারের জন্য নিরাপদ খাদ্যটিকেই গুরুত্ব দিই। একজন বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ছাত্রী ও মা হিসেবে বিষয়গুলো আমাকে ভাবায়, বুঝতে শেখায়, কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়। শুধু নিজের জন্যই নয়, দেশের মানুষকে ভালো ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে নিজেকে অংশীদার করার চিন্তাভাবনা বহুদিন থেকেই আমাদের ছিল। এসব চিন্তা থেকেই বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) প্রতিষ্ঠা করি; যেটিতে আমাকে অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা, পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন আমার স্বামী জনাব সাঈদ সরোয়ার লিটু।

ছোট মেয়ের সাথে বায়োমেন্ড রেঞ্চ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জাকিয়া সরোয়ার (ইনসেটে)।

উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন, দেশের নারী উদ্যোক্তা ও ব্যাতিক্রমী এক ক্যাটল ফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জাকিয়া সরোয়ার। দেশের অন্যান্য ফার্ম থেকে বায়োমেন্ড রেঞ্চ -এর কিছুটা ব্যাতিক্রম দিক মূলত এর ভেতর ও বাহিরের পরিবেশ। চারদিকে বিঘার পর বিঘা সবুজ গাছপালা, লেবু ও কলাবাগান ঘেরা নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে এটি যেন কোন গরুর খামার নয়, একটি বাংলো বাড়ী। ভেতরে ঢুকলে যে কারোরই মন জুড়িয়ে যাবে, দেয়াল থেকে শুরু করে ফার্মের প্রতিটা গাছ ও অন্যান্য সবকিছু পরিপাটি করে সাজানো। মাত্র অল্প কয়েক বছর হয়েছে, আরো অনেক পরিকল্পিত ও সৌখিনভাবে সাজানোর ইচ্ছে আছে বলে জানালেন জাকিয়া সরোয়ার।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার লক্ষীন্দর থানার তালতলা গ্রামে অবস্থিত বায়োমেন্ড রেঞ্চ ১৩০ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। চারদিকে সবুজ আচ্ছাদনে ভরা ফার্মটির দেয়ালের চারপাশে কলা ও লেবুর বাগান সমৃদ্ধ। কোরবানি উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য এখানে বিভিন্ন জাতের প্রায় ১৫০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে, যাদের গড় ওজন ২০০-১২০০ কেজি। এখানে বর্তমানে ২০ জন কর্মী এবং ৪জন কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের সবার জন্য ফার্ম এরিয়ার ভেতরে থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। শুধু গরু কেনার জন্য নয়, পরিবার নিয়ে কেউ এখানে বেড়াতে আসলে কটেজ কিংবা গেস্ট হাউজের স্বাদ পাবেন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমরা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করলাম খাবারের মাধ্যমেও বিভিন্ন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে। সেটি হতে পারে গরুর বা পশুর ঘাস থেকেও- যদি সে ঘাসে কীটনাশক, রাসায়নিক সার, আগাছানাশক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ জাতীয় খাবার আমরা যখন গরুকে দেই সেটি ঘাস হোক, খড় হোক বা সাইলেজ হোক সেগুলোর রেসিডিও গরুর মাধ্যমে চলে আসে। যার ফলে এই মাংসটাও পুরোপুরি নিরাপদ থাকে না’ -বলছিলেন জাকিয়া সরোয়ার।

তিনি বলেন, বিষয়গুলোকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিই’ যাতে গরুর খাদ্যটা নিরাপদ হয়। কারণ, গরুকে অনিরাপদ খাদ্য খাইয়ে কখনো নিরাপদ মাংস উৎপাদন সম্ভব না। এমনকি গরুকে পান ও গোসল করার জন্য আমরা যে পানি সরবরাহ করি সেগুলোর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করি প্রতিনিয়ত। আসলে যে কোন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিটি স্টেপ সতর্ক থাকতে হয়। এছাড়াও গরুর জন্য পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও খোলামেলা পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে তাদের ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ হয়, সুস্থ ও সবল থাকে। আমরা নিজেদের জমিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাস চাষ করি এবং সেগুলো যাতে নিরাপদ হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখি। সুষম ও নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফার্মে দিনে অন্তত দুবার জীবাণুনাশক স্প্রে করি। নিয়মিত ভ্যাকসিন সিডিউল ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ এবং সেগুলোর উইথড্রল পিরিয়ড মেনে চলি। এছাড়াও জাত নির্বাচনের পর যখন কোন নতুন গরু আমাদের ফার্মে নিয়ে আসি তখন সেটিকে আলাদাভাবে ১৫ দিন রাখি। এই সময় ডিওয়ার্মিং করি; কারণ ডিওয়ার্মিং ছাড়া গরুকে আমরা যাই-ই খাওয়াই সেগুলো কৃমির পেটে চলে যাবে।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

জাকিয়া সরোয়ার আরো বলেন, আমাদের খামারে এসে পরিবেশ ও গরুগুলো দেখলেই যে কেউ এগুলো বুঝতে পারবেন। আমাদের গরুগুলো নিয়ে জবাই করার পর মানুষ বুঝতে পারবেন, সেটি আসলে কতটা মানসম্মত। কারণ, একটি গরুটি আসলে কতটা সুস্থ সবল সেটি নির্ভর করে তার লিভার বা কলিজার কোয়ালিটির ওপর। কলিজা বা লিভার ভালো মানে গরুটি ভালো বা নিরাপদ ছিল। গরু জবাই করার পর যদি কলিজাতে কোন দাগ, পাথর বা পোকা থাকে; অথবা কলিজা ধরলে অনেক সময় ভেঙ্গে যায় বা রঙ ফ্যাকাসে থাকে তাহলে সে গরুটি সুস্থ ছিল না। আমাদের গরুগুলোতে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না বলে আমরা নিশ্চিত করতে পারি। এরপরও কেউ তেমন কিছু পেলে অবশ্যই জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আমাদের ফার্ম ম্যানেজার সাহেবের মোবাইল নাম্বারে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন। তাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের গরুগুলো নিতে পারেন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

“কোরবানি যেহেতু বছরে মানুষ একবারই দেয় এবং সেই কোরবানির মাংস পরিবার ও অন্যান্য মানুষকে নিয়ে খাবেন সেহেতু একটি ভালো ও নিরাপদ পশু জবাই দেয়াই উত্তম। গরু যেখান থেকেই কিনুন সেটি যেন সুস্থ, সবল ও নিরাপদ হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের ফার্ম থেকে নিলে আমরা এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, এটি নিরাপদ একটি গরু। এছাড়াও দামের ব্যাপারে আমরা যে খুব বেশি কমার্শিয়াল চিন্তা করছি তা নয়, সেইফ ফুড আগে দেয়া, কাস্টমার এসে ভিজিট করে দেখে, একটা শখের জিনিস নিবে, গরুর সৌন্দর্যের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে, তবে আমরা মার্কেটের বাইরে না, মার্কেটে গরুর দাম যা আছে আমরা সে দামেই বিক্রি করছি এবং ক্রেতার সাথে একটা টেকসই সম্পর্ক তৈরি হবে বলে আশা করছি” -যোগ করেন জাকিয়া সরোয়ার।

আমাদের একটাই উদ্দেশ্য এখানে এসে মানুষ একবার ভিজিট করে যাক। ফার্মটা আসলে যে জায়গায় হওয়া উচিত, যে পরিবেশে হওয়া উচিত মানুষ দেখে যাক। এলাকাটা একটু দূরে হলেও ফার্মের জন্য এটি আইডিয়াল প্লেস।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

এ সম্পর্কে বায়োমেন্ড রেঞ্চ ম্যানেজার (ফার্ম ডিভিশন) কৃষিবিদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন,  Care for Body and Brain স্লোগান নিয়ে বায়োমেন্ড এর যাত্রা শুরু। বায়োমেন্ড শব্দের অর্থ মূলত প্রাকৃতিক, বিশুদ্ধ বা জেনুইন। প্রতিটি খাবারের রোগ আরোগ্য করার ক্ষমতা আছে যদি সেগুলো নিরাপদ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। আমরা নিজেরাই এমন সব ফল, সবজি ও গরুর ঘাস উৎপাদন করছি যাতে সঠিক মাত্রায় মাইক্রো ও ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট থাকে। বায়োমেন্ড রেঞ্চ -এর প্রতিটি পশু এই ব্যালেন্স নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার খায়। এছাড়াও দানাদার খাদ্য যেমন-ভুট্টার আটা, গমের ভূসি, মুগ ভূসি, মাসকলাই ভূসি, ডাবলী ভূসি, সরিষা খৈল, চিটাগুড় খাওয়ানো হয়।

তিনি বলেন, এভাবে পালনকৃত পশু থেকে প্রাপ্ত নিরাপদ মাংস বা খাবারের মাধ্যমে মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। মানব শরীরের সেলুলার লেভেল যদি ঠিক থাকে তবে অনেক অসুখ বিসুখ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এজন্য আমাদের ফার্মের নাম বায়োমেন্ড। আমাদের ফার্মের গরুগুলোর ব্যাপারে আমরা একটি ব্যাপারে নিশ্চিত করতে চাই এবং সেটি হলো যারা এখান থেকে গরু সংগ্রহ করবেন তারা সুস্থ, সবল ও নিরাপদ মাংস পাবেন।

আবু বকর সিদ্দিক আরো বলেন, আমাদের বায়োমেন্ড রেঞ্চ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মালিক জনাব একেএম সাঈদ সারোয়ার (লিটু) একজন রুচিশীর ব্যাক্তিত্ব এবং নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে তিনি সবসময় সজাগ। কোভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১৭-১৯ সন পর্যন্ত এদেশের জন্য ভালো যেমন- আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস, মাংসের গুণাগুণ সর্বোপরি বাণিজ্যিকভাবে উপযোগি ৫টি জাত (শাহীওয়াল, লোকাল ব্রাহমা, দেশাল, নেপালী, ফ্রিজিয়ান) নিয়ে গবেষণা বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। উক্ত গবেষণায় আমাদের দেশের জন্য উল্লেখিত জাতগুলো উপযোগী হিসেবে প্রমাণ পাই। এরপর আমরা বাণিজ্যিকভাবে বায়োমেন্ড রেঞ্চ ‍শুরু করি।  বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ইউটিউবে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বায়োমেন্ড রেঞ্চ (Biomend Ranch) ফেসবুকে ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মোতালেব জানান, এই ফার্মে প্রতিদিন অন্তত দু’বার আমি দেখতে আসি। এখানকার মালিক থেকে কর্মকর্তাবৃন্দ শুধু ফার্মের গরুর প্রতিই নন, কর্মকর্তা ও স্থানীয় মানুষের প্রতিও অনেক যত্নশীল। গরুকে তারা সবচে বেশি ঘাস খেতে দেন এবং যে পানিগুলো বিশুদ্ধ কি না সেগুলো প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করান। প্রতি সপ্তাহে এক দুটি গরু জবাই করা হয়, যেগুলোর মাংস ঢাকায় যেমন যায়, আমরা নিজেরাও খাওয়ার জন্য ক্রয় করি। মানুষ এখানে না আসলে বুঝতে পারবেন কত সুন্দর একটি পরিবেশে, যত্নআত্তির মাধ্যমে গরুগুলো এখানে লালন পালন করা হয়।

কোরবানির গরু ক্রয় করতে ও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন:  কৃষিবিদ আবু বকর সিদ্দিক (বিপুল), মোবাইল: ০১৭১৬-৫১২৪৩৩

This post has already been read 3577 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …