ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনায় কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাইকারদের সঙ্গে দর কষাকষি করেই চামড়া কেনা-বেচা করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এদিকে ভারতে কোরবানি পশুর চামড়া পাচার রোধে খুলনাঞ্চলের বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
খুলনায় চামড়া বেচাকেনার জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। ফলে নগরীর শেখপাড়ায় সড়কের ওপর দাঁড়িয়েই পশুর চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা। অপরদিকে চামড়া সংগ্রহের পর তা সংরক্ষণে বেশ বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বাড়ি অথবা ঘর ভাড়া নিয়ে লবণজাত করছেন চামড়া।
খুলনার লবণচরা হাজী আব্দুল মালেক ছালেহিয়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসা ও ইয়াতিমখানার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মো. শাফায়াতুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর তাদের প্রতিষ্ঠান মোট ১০১টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছে। যার মধ্যে ছোট সাইজের প্রতিটি গরুর চামড়া ৩০০ টাকা এবং বড় সাইজের চামড়া প্রতিটি সাড়ে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর মাত্র ২২৫ টাকা করে প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছিল। আর ছোট গরু ও ছাগলের চামড়া মাটির নিচে চাপা দিতে হয়েছিল। সে তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে।
খুলনার মদিনানগর মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মুফতী কামাল হোসেন বলেন, ‘সংগৃহ করা গরুর চামড়ার মধ্যে ছোট আকারের প্রতিটি ১৫০ টাকা এবং বড় সাইজের গরুর চামড়া ৪০০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছেন তারা। তবে, দাম আরো বাড়তি থাকলেও পাইকাররা কৌশলে কম দিয়েছেন।’
লবণচরা দক্ষিণ মোহাম্মদনগর রূপসী রূপসা এলাকার আমির হোসেন মোল্লা কওমী মাদরাসা কমপ্লেক্সের মুফতি আল আমিন জানান, আগে এমন একটা সময় ছিল যখন চামড়ার দাম ছিল আকাশচুম্বি। তখন পশু জবাই করতে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এর ছাত্ররা ছুটে বেড়াতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর পশুর চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। গত দু’ বছর বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয় চামড়া। তবে এাবার কিছুটা বেড়েছে চামড়ার দাম।
নগরীর খালিশপুর এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মো. আব্দুল খালেক বলেন, এবার তিনি সর্বনিম্ন সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চামড়া কিনেছেন। এর মধ্যে ছোট চামড়া ৩৫০ টাকা, মাঝারি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং বড় সাইজের প্রতিটি চামড়া কিনেছেন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। তবে তিনি এসব চামড়া কোনো সাইজ কত টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন- সেটি বলতে রাজি হননি।
দৌলতপুরের মিনাক্কি এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মো. সেলিম শেখ বলেন, তিনিও এবার সাইজ অনুযায়ি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা মূল্যে প্রতিটি চামড়া কিনেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী মো. বাবর আলী জানান, খুলনায় চামড়া বেচা কেনার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। তাই রাস্তায় দাড়িয়ে চামড়া কিনতে হয়। স্থান না থাকায় চামড়া কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করতে করতে ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যবসায়ী মো. জাফর বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে খুলনার ব্যবসায়ীদের দেড় কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতিদিনই আশ্বাস দেয় টাকা দেবে। কিন্তু টাকা দেয় না। এই টাকা না পাওয়ায় পর্যাপ্ত চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম ঢালী জানান, এ বছর ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা, ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া ৫০০ টাকা এবং লাখ বা তার ওপরের চামড়া সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা করে প্রতি পিস কেনা হয়েছে। তারপরও প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণ করতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ রয়েছে। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে প্রতি বছরের মত এবারও বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে জরুরী প্রয়োজনে চামড়া ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থেই লবণ কিনতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া চামড়া ক্রয়ের জন্য তারা নগরীর শেখপাড়ায় (সাবেক চামড়া পট্টি) অস্থায়ীভাবে এক সপ্তাহের জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে চামড়া কিনছেন। তবে অনেকেই নিজ বাড়ি অথবা ঘর ভাড়া নিয়ে সংরক্ষণ করছেন চামড়া। তিনি আরো বলেন, খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের বিগত বছরগুলোর কয়েক কোটি টাকা ঢাকার ট্যানারি ও আড়তে বকেয়া রয়েছে। ফলে এ ব্যবসায় নতুন করে আসছেনা কেউ। বরং কমছে। এবার সব মিলিয়ে ১২/১৫ জন ব্যবসায়ী এবং কিছু ফঁড়িয়া চামড়া কিনেছেন ।
সীমান্তে সতর্কতাঃ কোরবানি পশুর চামড়া ভারতে পাচার রোধে যশোরের বেনাপোল-শার্শা সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নজরদারিতে আনা হয়েছে বন্দর এলাকাসহ স্থল ও রেলপথ। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে বিজিবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল ও শার্শার পুটখালী, গোগা, কায়বা, অগ্রভুলোট, রুদ্রপুর, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, ঘিবা, সাদিপুর, বড় আঁচড়া, কাশিপুর, রঘুনাথপুর শিকারপুর, শালকোনা এবং শাহজাতপুর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মুনজুর-ই-এলাহী বলেন, ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বিজিবি। যশোরের যে সমস্ত সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা থাকে, সে সমস্ত এলাকা বেশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চামড়া পাচার রোধে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তগুলো চিহ্নিত করে টহল ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবত থাকবে।