ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ও বাকারচর এলাকার দুই দিকে সাতক্ষীরা, অন্যদিকে যশোরের সীমানা। ওই এলাকায় এক সময় বয়ে যেতো কপোতাক্ষ নদ। তবে ভরাটের কারণে ২০০৬ সাল থেকে অস্তিত্ব হারাতে শুরু করে। এতে আমন ও বোরো ধানসহ তিন ধরনের ফসল আবাদ হওয়া ২০ হাজার বিঘা জমি রূপ নেয় এক ফসলি জমিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়)’ কাজ শুরু হয়েছে। ফলে নতুন আশা দেখছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প’ (দ্বিতীয় পর্যায়) গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পে কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে নদের উজান অংশে চৌগাছা থেকে মণিরামপুর পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার ও নিচের অংশে পাইকগাছার বোয়ালিয়া থেকে কয়রার আমাদী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নদী খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতসহ সংযুক্ত খাল খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সরকারি অর্থায়নে ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। তাছাড়া এখানে পলি ব্যবস্থাপনা, টাইডাল প্রিজম বৃদ্ধি ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর মেয়াদি জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ রয়েছে। এরই মধ্যে এক্সকাভেটরের মাধ্যমে খনন চলছে মরা কপোতাক্ষে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সাতক্ষীরার আশাশুনির শালিখা থেকে পাইকগাছার হারেসখালী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়। কাজটি সাতটি প্যাকেজে চলছে। ছয়টি প্যাকেজে ২৪ কিলোমিটার এলাকা খননে ছয় জন ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছেন। সপ্তম প্যাকেজে ৬ কিলোমিটার এলাকার খননের জন্য এখন ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়া চলমান।
শালিখা থেকে বল্লভ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকার খনন কাজ করছেন হাবিবুর আলী। মূল ঠিকাদার আলমগীর হেসেন। এ কাজের ম্যানেজার কাজল আক্তার জানান, তারা নদীর তলায় ১০০ ফিট ওপরে ২৪২ ফিট এবং ১৩ দশমিক ৫ ফিট গভীর করে খনন কাজ করছেন। এ কাজের শুরুতে ছয়টি অবৈধ বাড়ি পাওয়া যায়। নোটিশ করার পর তারা ঘরবাড়ি তুলে নিয়ে চলে গেছে। একটা ঘর আছে। ওটা খননের সময় ভেঙে দেওয়া হবে।
নদীর তীরের বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘১৮ বছর আগে এখানে শ্বশুরবাড়িতে এসে নদী দেখেছি। হঠাৎ করেই নদীটি ভরাট হয়ে যায়। সেখানে ফসল চাষ হয়। এখন খনন করে নদীটি আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এতে আমাদের অনেক উপকার হবে। নদীর চরে ঘর তোলা প্রসঙ্গে মোহনা সরদার বলেন, ‘১০ হাজার টাকা দিয়ে খাস জমি কিনেছিলাম। তারপর ঘর তুলে বসবাস শুরু করি। এখন নদী খনন চলছে। আমাদের জমিও ছেড়ে দিতে হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ কিলোমিটার এলাকা খনন কাজ চলছে। এখানে সাতটি প্যাকেজের একটিতে ঠিকাদার বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। অন্য ছয়টি প্যাকেজে কাজ চলছে। এ কাজ ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। আর সম্পূর্ণ নদী খনন কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে। এরপর বাকি থাকবে যশোর অঞ্চলের কিছু কাজ। খনন শেষে কপোতাক্ষ তার স্বরূপে ফিরবে।