ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিলেও লোকসানের ভয়ে খুলনার ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যদিও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, চালের বাজারে সিন্ডিকেট ঠেকাতে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে খুলনা ও সাতক্ষীরার ২৫ আমদানিকারককে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৭০ হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির অনুমতি পায় আমদানিকারকরা। প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে ৯০ শতাংশ চাল দেশে আমদানি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের কালনা ও বর্ধমান থেকে এ চাল আমদানি করা হয়। ডলারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে চালের দামও। চাল আমদানিতে রয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক। এ অস্থিতিশীল পরিবেশে খুলনার অনেকেই চাল আমদানি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রাজলক্ষী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধর গোপাল সাহা বলেন, ১ হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির জন্য অনুমতি পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমদানিতে আগ্রহ কম দেখানোর কথা বলে তিনি জানান, ডলারের মূল্য বেড়েছে। তাছাড়া ভারতে চালের দাম প্রতিকেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতিকেজি চালে ট্যাক্স দিতে হয়। খুলনার বাজার পর্যন্ত ভালো মানের সরু মিনিকেট চাল আনতে ৬৫ টাকার উপরে খরচ পড়বে। স্থায়ী বাজারে এর থেকে আরো বেশি দরে বিক্রি হবে। যা আমাদের স্থানীয় বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি আরো জানান, গেল বার অনুমতি পাওয়া প্রতি মেট্রিকটনের মূল্য ছিল মোটা চাল ৩৬০ ডলার ও চিকন ৪২৫ ডলার। এবার তা বেড়ে ৪৯০ ডলারে পৌছেছে। তাই লস করে তার প্রতিষ্ঠান চাল আমদানি করবেনা।
অপর একজন ব্যবসায়ী বলেন, দেশে চালের কোন সংকট নেই। কিন্ত ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকার চাল আমদানির ঘোষণা না দিলে চালের বাজার আরো বেড়ে যেত। তিনি আরো বলেন, ভারত থেকে এলসির চাল আনতে ২০ দিন সময় বেশি লাগে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান ও কালনা থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত পরিবহনের সময় লাগে ১২ ঘন্টা। কিন্তু যানজটের কারণে বাংলাদেশ পর্যন্ত চাল আসতে এ সময় লাগে। ভারতের পেট্রাপোল দিয়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক বিভিন্ন মালামাল বাংলাদেশে আসে। এ ট্রাকের মালামাল আনলোড করতে সময় লাগে। এবার সব ট্যাক্স ও পরিবহন খরচসহ চাল আনতে তার অনেক লস হবে। এই ভেবে তিনিও চাল আমদানি করবেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
কাজী সোবহান ট্রেডিং কর্পোরেশনের কর্ণধর সুজন কাজী বলেন, ভারতে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল বছরে ডলারের দাম ছিল ৮৬.৭৫ টাকা। বর্তমানে ৯ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায় দাড়িয়েছে ডলারের দাম। ডলারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। ডলারের দাম ও চালের মূল্য না কমলে তিনি চাল আমদানি করবেন না।
যদিও বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, চালের বাজারে সিন্ডিকেট ঠেকাতে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে বাজার স্থিতিশীল থাকবে, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতেই সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্গেট আছে। সেই পরিমাণ চাল দেশে এসে গেলে আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা প্রতিদিনই নিবিড়ভাবে বাজার মনিটর করছি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করছে। কাজেই চাল আমদানির ফলে দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। মন্ত্রী বলেন, চালের দাম চাহিদা-সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। তবে সিন্ডিকেট করে অনেকে বেশি মুনাফা করার চেষ্টা করে। এদেরকে নিবৃত করার জন্যও চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির ফলেই চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং আমার ধারণা, দাম কিছুটা কমেছে।