গাজীপুর সংবাদদাতা: বারি’র বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে চাষোপযোগী জাত এবং ৬০২টি অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তিসহ এ যাবৎ মোট ১,২২৪টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, সবজি, মসলা এবং ফলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর “অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০২২” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। ইনস্টিটিউটের কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে উক্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০২১-২০২২ সনে যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ২০২২-২০২৩ সনে গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাঁছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূচি গ্রহণ করাই এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য বলে জানায় ইনস্টিটিউট। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনসমূহ আগামী ১৮ জুলাই ২০২২ হতে শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বারি’র বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রম পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, শুধু ফসল উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ ও রপ্তানী উপযোগী ফসল উৎপাদন করতে হবে। আর এটা করতে পারলে আমাদের রপ্তানী আয় অনেক বেড়ে যাবে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ না করতে পারলে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হবে না। আমাদের দেশে যে সকল কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তার ১৫-৭০% আমদানি নির্ভর। এই আমদানি নির্ভর কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে টেকসই কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষিখাতে সরকার বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। তিনি প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন ও আগামীর কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনে বিজ্ঞানীদের আহবান জানান।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারি’র পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে বারি’র গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্যের উপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ফেরদৌসী ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. অপূর্ব কান্তি চৌধুরী, পরিচালক (কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র) ড. সোহেলা আক্তার, পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. আব্দুল লতিফ আকন্দ এবং পরিচালক (ডাল গেবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. মহি উদ্দিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বারি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে লাভজনক করা (এফএমডিপি)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ‘প্রতিভা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ‘কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকাশ পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় ৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জনকে তাদের উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। যার মধ্যে ছিল প্রথম পুরস্কার ১টি (৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট); দ্বিতীয় পুরস্কার ৩টি (প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট) এবং তৃতীয় পুরস্কার ৬টি (প্রতিটি ২০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট)। উদ্বোধনস্থলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা তাদের উদ্ভাবিত উদ্ভাবনসমূহ প্রদর্শন করেন। উদ্ভাবনের প্রকৃতি অনুযায়ী পরবর্তীতে তাঁদের সময়াবদ্ধ কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এসব উদ্ভাবনী থেকে কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে তা বারি ও উদ্ভাবকের যৌথ নামে প্যাটেন্ট করা হবে বলেও জানানো হয়। প্রকল্প চলাকালীন সময়ে প্রতি বছর এ প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের কৃষি উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন। জাতীয় কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। এইসব কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষিতে বৈচিত্র্য আনয়ন এবং চালের ওপর চাপ কমানো। দেশের কৃষিতে বিদ্যমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন উপায় এসব পরিকল্পনায় থাকে। বিগত বছরে যেসব গবেষণা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নের রিপোর্ট এ গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা ২০২২ এর মাধ্যমে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে তা আগামীতে দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।