রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করবে সিজিআইএআর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী তিন বছরে সিজিআইএআর  রিসার্চ পোর্টফোলিও একটি অত্যন্ত প্রতিকূল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষক, আদিবাসী মৎস্যজীবী এবং খাদ্য-অনিরাপদ পরিবারের জন্য জীবিকা, উৎপাদনশীলতা এবং স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে বলে অভিক্ষিপ্ত হয়েছে। সারা বিশ্বে ৭০০ মিলিয়নের বেশি মানুষের মধ্যে যারা প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে। এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসলের ফলন কমে গেছে। কৃষকরা প্রতিনিয়ত খরা, তাপপ্রবাহ এবং অনিয়মিত আবহাওয়া প্রবনতার মুখোমুখি হচ্ছে। এছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়ায় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব এবং ইউক্রেনের সংঘাতের ফলস্বরূপ সার, খাদ্য ও জ্বালানির ধারাবাহিক দাম বৃদ্ধি।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিরা গবেষণা, সক্ষমতা এবং অ্যাডভোকেসি অগ্রাধিকার বিবেচনা করার জন্য (২০ জুলাই) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সিজিআইএআর-এর সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন এবং কীভাবে ওয়ান সিজিআইএআর সিস্টেম পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশে লাভবান হওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে কাজ এবং কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার সম্ভাবনা উন্মোচন করতে উন্নত বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের গবেষণা পোর্টফোলিও চালু করেছে ,জানায় সিজিআইএআর।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি, বলেন, সিজিআইএআর-এর এই উদ্যোগ জলবায়ু সংকটে খাদ্য, ভূমি ও পানি ব্যবস্থার রূপান্তরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের উপর গুরুত্বারোপ করে যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা সরকার, বেসরকারী খাত, উৎপাদক এবং ভোক্তাদের মধ্যে একটি যৌথ দায়িত্ব হওয়া উচিত। এই সব খাতে কাজ করে খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন সম্পর্কিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তৈরি করতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।“

সিজিআইএআর আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) তেমিনা লালানি শরীফ বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের (সিজিআইএআর) সহযোগীতার ৫০ বছরের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এই সহযোগীতাকে আমাদেরকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেন আমরা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান পরিবেশ এবং পুষ্টি সংক্রান্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে পারি। বাংলাদেশে উদীয়মান সমস্যা এবং গবেষণার ঘাটতি নিয়ে স্বচ্ছ ও চিন্তাশীল সংলাপ হয়েছে। আমি আমাদের অংশীদারদের আশ্বস্ত করার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত যে ‘ওয়ান সিজিআইএআর’ এ রূপান্তর আমাদের বৈশ্বিক সক্ষমতাগুলি কাজে লাগানোর জন্য একটি ওয়ান-স্টপ শপ প্রদান করবে।“

তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অংশীদারদের উষ্ণ অভিনন্দন জানাতে চাই, যাদের বিশেষ অভিজ্ঞতা, অঙ্গীকার এবং সহযোগীতা খাদ্য, ভূমি ও পানি ব্যবস্থায় আমাদের সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ।

উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার বিষয় হিসেবে পরিবেশগত স্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্য, দারিদ্র্য হ্রাস, জীবিকা এবং চাকরি, লিঙ্গ সমতা, এবং পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিজিআইএআর এর ১২ টি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে:

  • ট্রান্সফর্মিং এগ্রি-ফুড সিস্টেমস ইন সাউথ এশিয়া (টাফসা), যে প্ল্যাটফর্ম থেকে সমস্ত সিজিআইএআর গ্লোবাল থিম্যাটিক ইনিশিয়েটিভস দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশে সম্পৃক্ত হবে খাদ্য উৎপাদন এবং ভোগের উপর গবেষণা এবং সম্পৃক্ততার একটি সমন্বিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে।
  • মিটিগেট+ রিসার্চ ফর লো-এমিশন ফুড সিস্টেমস, যা খাদ্য ব্যবস্থা থেকে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনকে সমর্থন করবে।
  • রেসিলিয়েন্ট সিটিস থ্রু সাসটেইনেবল আরবান অ্যান্ড পেরি-আরবান এগ্রিফুড সিস্টেমস, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ক্রমাগত একটি নগরভিত্তিক পৃথিবীর দিকে ধাবিত হবার সময়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই খাদ্য বাজার গড়ে তোলা, সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষিত করা এবং (পেরি-) আরবান অঞ্চলে পুষ্টিকর খাবারের টেকসই উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দেয়া।
  • সাসটেইনেবল ইন্টেন্সিফিকেশন অব মিক্সড ফার্মিং সিস্টেমস, যা একই জমিতে পরিবেশের ঋনাত্নক প্রভাব কমিয়ে বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সিজিআইএআর সম্পর্কে

সিজিআইএআর  খাদ্য-নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী গবেষণা অংশীদারীত্ব। সিজিআইএআর বিজ্ঞান জলবায়ু সংকটে খাদ্য, ভূমি এবং জল ব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য নিবেদিত। জাতীয় ও আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ সংস্থা, একাডেমিয়া, উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারী খাত সহ শতাধিক অংশীদারের সাথে নিবিড় সহযোগিতায় ১৩ টি সিজিআইএআর কেন্দ্র/জোট দ্বারা এর গবেষণা পরিচালিত হয়।

দ্য ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট (আইডব্লিউএমআই), দ্য ইন্টারন্যাশন রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আইআরআরআই), দ্য ইন্টারন্যাশনাল লাইভস্টক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আইএলআরআই), দ্য অ্যালায়েন্স অব বায়োডাইভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিআইএটি (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচার) এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল মেইজ অ্যান্ড হুইট ইমপ্রুভমেন্ট সেন্টার (সিআইএমএমওয়াইটি)  এর সমন্বয়ে সিজিআইএআর এর বাংলাদেশ সেন্টারগুলো গঠিত।

This post has already been read 2783 times!

Check Also

অ্যামচেম এর সাথে বিডার সংলাপ

আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশ আজ ( সোমবার ,২১ অক্টোবর) রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে …