নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছি। ডিএপি সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমে নি।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারের দাম বৃদ্ধি, মজুদসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। কৃষিসচিব মো: সায়েদুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ফসলের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০% কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে, কৃষকের খরচও কমবে। এটি করতে হলে আমাদের কৃষক ভাইসহ সকলের সচেতনতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এছাড়া নন ইউরিয়া সার ( টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪ গুণ বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমরা দাম বাড়াই নি। কাজেই, ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
বর্তমানে দেশে চাহিদার বিপরীতে সব ধরণের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে- সে ব্যাপারে আমরা নিবিড়ভাবে মনিটর করছি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ভর্তুকির ছিল ১৫ টাকা, টিএসপিতে ২.৫৩ টাকা, এমওপিতে ২.৬২ টাকা, ডিএপিতে ৫.৫০ টাকা আর বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ইউরিয়াতে ৫৯ টাকা, টিএসপিতে ৮৬ টাকা, এমওপিতে ৯১ টাকা,ডিএপিতে ১০৭ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ০৩ থেকে ০৪ গুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার আমদানি ব্যয় ৮১ টাকা, টিএসপি ১০৮ টাকা, এমওপি ১০৬ টাকা এবং ডিএপিতে ১২৩ টাকা। এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৫৯ টাকা, টিএসপি ৮৬ টাকা, এমওপি ৯১ টাকা এবং ডিএপিতে ১০৭ টাকা। এবং সারে প্রদত্ত সরকারের মোট ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ০৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা; সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদরদী, কৃষকের প্রতি রয়েছে তাঁর পরম মমতা। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিতরণসহ সার্বিক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে। কৃষি উপকরণের দাম যেমন কমিয়েছে তেমনি সহজলভ্য করে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ফলে গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোন সংকট হয়নি।