বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

শরিফা’র বাণিজ্যিক চাষ পদ্ধতি

. মো. শামছুল আলম : শুধু বাংলাদেশেই নয়, শরিফা  এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে আমেরিকার ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়া, থাইল্যান্ড, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্নশরিফা পাকা ফলের শাঁস মিষ্টি ও খাওয়ার সময় চিনির মতো মিহি দানার মতো লাগে।পাকা ফরের শাঁস বলকারক, বাত নিবারক, বাত পিত্তনাশক। শিকড়ের রস রক্ত আমাশয় সারাতে ব্যবহৃত হয়। নিচে শরিফা ফলের চাষপদ্ধতির যাবতীয় খুঁটিনাটি তুলো ধরা হলো-

প্রয়োজনীয় আবহাওয়া
শরিফা গাছ শুষ্ক ও গরম পরিবেশ পছন্দ করে। এতে শরিফার  ফলন ও গুণগতমান উভযই ভালো হয়। তবে কুলের পরিবেশ উপযোগিতা ব্যাপক বিধায় আর্দ্র ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় সফলভাবে এর চাষ করা সম্ভব। অতিরিক্ত আর্দ্র জলবায়ু কুলের জন্য  ক্ষতিকর। ছায়ায় জন্মানো গাছের ফলন ও মিষ্টতা  কম হয়। বেশি তাপমাত্রায় ফলের আকার বড় বা ছোট হয় এবং অল্প সময়ে ফল পূর্ণতা লাভ করে।

উপযুক্ত মাটি
এ ফলের জন্য পানি সেচ ও নিষ্কাশন সম্পন্ন  মধ্যম অম্ল-ক্ষারত্ম (pH =৫-৮.৫)সম্পন্ন  দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পাহাড়ি ও সমতল উভয় এলকাতেই সব ধরনের মাটিতেই বাণিজ্যিকভাবে শরিফা চাষ করা হয়। অন্যান্য প্রধান ফল ও ফসলের জন্য উপযোগী নয় এ ধরনের অনুর্বর জমিতেও সন্তোষজনকভাবে শরিফা চাষ করা যায়। বেলে মাটিতেও এ শরিফা সফলভাবে চাষ করা যায়।

বংশবিস্তার
সাধারণত বীজ দিয়েই শরিফার বংশবিস্তার করা হয়। বীজের খোসা খুবই শক্ত ও ঠিকমত সংরক্ষণ করলে সাত দিন পর্যন্ত অংকুরোদগম ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে। বীজ বপনের আগে একদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অংকুরন তাড়াতাড়ি হয়। তবে ইদানিং বীজ থেকে চারা তৈরি না করে কলম করা হয়। কারণ বীজের চারায় মা গাছের আসল গুণাগুন থাকে না।

উৎপাদন পদ্ধতি
শরিফা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ভালভাবে পরিষ্কার করে ষড়ভুজ পদ্ধতিতে ৩ মি. X ৩ মি./ ৪ মি. x ৪ মি. দূরত্বে ৫০-৭৫ সে.মি. x ৫০-৭৫ সে.মি. x ৫০-৭৫ সে.মি আকারে গর্ত খনন করে প্রতি গর্তে  ২০ কেজি পচা গোবর, ৫০ গ্রাম খৈল, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫০ গ্রাম পটাশ ও ২ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হবে। সুপারিশকৃত সার প্রয়োগ করে গর্তের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে ১৫-২০ দিন পরে কলমকৃত শরিফার  চারা রোপন করা হয়। রোপনের ২/৩ মাস পর  প্রতি গাছে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও পটাশ এবং ৪০-৫০ গ্রাম করে বোরন ও জিংক সার প্রয়োগ করতে হবে।ভালো ফলনের জন্য প্রতি বছর মার্চ- মে মাসে  ২০ কেজি পচা  গোবর, ৫০ গ্রাম খৈল, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫০ গ্রাম পটাশ ও ২ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে অবশ্যই পানি সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

নতুন রোপনকৃত বা কলমকৃত গাছে আদিজোড় হতে উৎপাদিত কুঁশি ভেঙ্গে দিতে হবে।ভালো ফলনের জন্য প্রতি বছরই ফল আহোরণের পরপরই ডাল ছাঁটাই আবশ্যক। এছাড়া মরা, দূর্বল, রোগাক্রান্ত ও এলোমেলোভাবে বিন্যাস্ত ডালও কেটে দিতে হবে। জলাবদ্ধতা সহ্য ক্ষমতা কম, তবে খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ প্রদান করলে ফলন ও ফলের গুণগতমান বৃদ্ধি পায়। পাকা মাকড় ও রোগ বালাইয়ের জন্য নিয়মিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বপন থেকে কর্তন পর্যন্ত সময়কাল
মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উত্তম সময় তবে পানি সেচ -এর ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরেই শরিফার চারা লাগানো যায়। এপ্রিল–জুন মাসে ফুল আসে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। ফুল আসার পর দুমাসের মধ্যে ফল পুষ্ট হতে শুরু হয়।

লেখক: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বিনা, বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ২২০২  

This post has already been read 4421 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …