নিজস্ব প্রতিবেদক: তৃণমূলে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষিত করা, ভোক্তা হিসাবে সচেতন করাসহ প্রতারিত হলেই সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হলে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। সরকার ব্যবসা বানিজ্য জোরদারে এফবিসিসিআইকে বাৎসরিকভাবে বানিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্ধ প্রদান করে, যা তারা পরবর্তীতে জেলা চেম্বারগুলোর মাঝে বিতরন করেন। একইভাবে পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ডাইবেটিক সমিতি ও বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্য, সমাজ কল্যান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্ধ প্রদান করা হলেও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় ক্যাব এখনও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সদস্যদের চাঁদা, অনুদানে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।
আবার অনেক আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানও চেম্বারগুলোকে সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে আর্থিক সক্ষমতার অভাবে স্থানীয় ভোক্তাদের মাঝে কাংক্ষিত সেবা প্রদানে সক্ষম হচ্ছে না। তাই ভোক্তা অধিকার নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে গণজাগরণ তৈরী করতে হলে ক্যাব এর জেলা-উপজেলা কমিটিগুলিকে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের বিকল্প নাই। তৃণমূলে জাগরণ তৈরী না হলে মানুষের অধিকারের আন্দোলন সফল করা সম্ভব নয়। ১৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ২০২২ইং নগরীর ক্যাব বিভাগীয় কার্যালয়ে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সাথে ক্যাব চট্টগ্রামের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তাগন উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম ও নেটওয়াকিং কমিটির সদস্য খাইরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশনেন ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সদস্য সচিব এস এম শাহওেয়াজ আলী মির্জা, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি হাজী আবু তাহের, ক্যাব উত্তর জেলা সদস্য সচিব শাহাদত হোসেন, সেলিম সাজ্জাদ, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মো. জানে আলম, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ফারুকী, সহ-সভাপতি আবু ইউনুচ, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব জামালখানের সভাপতি সালাহউদ্দীন আহমদ, ক্যাব পূর্ব শোল শহরের সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব কালুরঘাটের রুবি খান, ক্যাব সদস্য ডা. নাজমুস সাকিব, শাহীন শিরিন, ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলাম, ক্যাব যুব গ্রুপের বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপের মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।
বক্তাগণ আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রূপ্তানী সম্পন্ন হবার কারণে দেশের নিত্যপণ্যের প্রধান বানিজ্যিক হাব চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকেই পুরো দেশের নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। স্বাভাবিক কারণেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠা দরকার। জনগনের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহন ছাড়া সরকারি যে কোন উদ্যোগ সফল হতে পারে না। ক্যাব চট্টগ্রাম ভোক্তা অধিকার সুরক্ষিত রাখতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহন করলেও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে অনেকগুলি উদ্যোগ সফল হতে পারে নি। যার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়নো, মানুষের পকেট কাটার উৎসব এখন সামাজিক সংক্রমনে পরিনত হয়েছে। কিছু মানুষ এই অস্থিরতায় সরকারকে দোষারুপ করলেও আর একটি গ্রুপ বৈশ্বিক অবস্থা ও দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার প্রসঙ্গ টানলেও প্রকৃত পক্ষে মানুষের নিরবতায় ক্ষোভ বাড়ছে। যা একটা সময় বিস্ফোরণ আকারে প্রকাশিত হবে।
বক্তাগণ আরও বলেন ক্যাব খাদ্যে ভেজাল, নিত্যপণ্য ও সেবা মূল্যের উর্ধ্বগতিরোধ ও ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় একটি অহিংষ আন্দোলন। গুটিকয়েক মানুষ “নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো” সামাজিক আন্দোলন করছে। কিন্তু কথায় আছে “কিছু অসাধু লোকের কারনে সমাজ নষ্ঠ হয় না, সমাজ নষ্ঠ হয় ভালো মানুষের নিরবতায়” এই শ্লোগানের মতোই খাদ্য ভেজাল হোক, নিত্যপণ্যের ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষের পকেট কাটুক, মাদক, ধুমপান, ইভটিজিং এর মতো সামাজিক অপরাধ ক্রমাগত সমাজকে গিলে খেলেও একশ্রেণীর মানুষ বলে থাকেন, আমি ভাল আছি, আমি সেখানে নাই এবং আমার সন্তান বিদেশে পড়ে। আর তাদের নিজে ভালো থাকার মতো আত্মতুষ্টির কারণে আজ আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
সমাজ ক্রমাগত অনিরাপদ ও বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে। মানুষ প্রতিনিয়তই ঠকছে ও প্রতারিত হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ, সিন্ডিকেট করে নিত্যভোগ্য পণ্যের বৃদ্ধি, বিভিন্ন সেবা সার্ভিস ভোগ করতে হচ্ছে। অতিমাত্রায় টেস্টিং সল্ট ও বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহারের কারণে খাদ্য এখন আর নিরাপদ নাই, অনেক খাদ্য বিষে পরিনত হচ্ছে। ফলে শিশুরা এখন বাড়ীতে তৈরী খাবারের চেয়ে ফাস্ট ফুডের দোকান, রেস্টুরেন্টে তৈরী খাবারে আসক্তি বেড়েছে। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের পকেট ভারী করছে। আর ভোক্তারা অসংগঠিত ও অসচেতন থাকার কারণে জীবন ও জীবিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার ভোগে প্রতিনিয়তই হয়রানি, প্রতারনা ও ঠকতে বাধ্য হতে হচ্ছেন। আর সেকারণে খাদ্যে ভেজাল, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর মতো সামাজিক ব্যাধিগুলি সংক্রমণ আকারে দেখা দিয়েছে। যার চুড়ান্ত পরিণতি ক্যাসিনোর মতো জুয়া, অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসার প্রসার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রের নির্মম হত্যাকান্ড।