ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন অঞ্চলের উপকুলীয় এলাকার নদ-নদী দখল ও দূষণের প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা ও মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে র্যালী, আলোচনা সভা ও কাগজের প্রতীকী নৌকা ভাসানো কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। রবিবার সকালে এ কর্মসুচির আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ আন্দোলন বাপা। ‘আমাদের জনজীবন নৌ-পথ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে মোংলা বন্দর নগরীতে র্যালী, আলোচনা সভা ছাড়াও পালন করেছে নানা আয়োজন। এতে অংশ নিয়েছে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ।
বিশ্ব নদী দিবসে সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষার দাবি জানিয়ে শিশুরা কাগজের প্রতীকী নৌকা ভাসিয়ে দিবসটি পালন করেন। “আমাদরে জনজীবনে নৌপথ” শ্লোগানে নদী দিবসে এ কর্মসুচি পালন করেন কোমল মতি শিশু-কিশোর, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষ। মোংলা উপকুলের সুন্দরবন সংলগ্ন নদী-খাল দখল ও দূষণের প্রভাব পড়েছে এখাকার বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রায়। নদী ভরাট হওয়ায় স্বল্প বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো রূপ নেয় জলাশয়ে। কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা আর নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবন সহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যায গোটা সুন্দরবন।
মোংলাসহ দেশের খাল-বিল-নদী-নালা দখল-দূষণের প্রতিবাদে ও রক্ষার দাবিতে রবিবার সকালে পরিবেশ আন্দোলন বাপা ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে র্যালী, আলোচনা সভা ও মোংলা বন্দরের পশুর নদী ও বঙ্গবন্ধু ঘষিয়াখালী ক্যানেল মোহনায় কাগজের প্রতীকী নৌকা ভাসিয়ে প্রতিবাদ জানায় কোমল মতি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবী, সরকার টেকসই উন্নয়ন র্কম-পরিকল্পনার অংশ হিসেব নদী-খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে সরকারের সহায়তার দাবী জানানো হয়। মোংলা উপজেলায় ৫৫টি প্রবাহমান সরকারি খাল রয়েছে। সেগুলো দখল করে প্রভাবশালীরা তাতে মাছ চাষ করা হচ্ছে যা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার দাবী জানানো হয়।
পরে মামার ঘটে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দূষণ-দখল-অপরিকল্পিত শিল্পায়ন-আবাসন-সেতু-কালভার্ট এবং নদীতে জাহাজ ডুবি, জাহাজী র্বজ্য নিক্ষেপ, অপরকিল্পতি চিংড়ি ঘের ও ট্যুরিষ্টরা অসচেতনতার কারণে বর্জ্ব ফেলে সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদীর অস্তিত্ব বিলিন করছে তা বন্ধ করার দাবী জানানো হয় এ পথ সভায়। তাদের এই অভিনব প্রতিবাদে জানানো হয়, “সুন্দরবন বাচলে এ অঞ্চলের মানুষ বাচবে”তাই সুন্দরবন, নদ-নদী ও খাল রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সুপেয় পানির চাহিদা নিশ্চিত করনের দাবি জানায় শিশুরা। এছাড়া যারা নদী-খালকে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ক্ষমতার প্রভাবে মানুষ নদী দখল করছে, নদী আমাদরে জনজীবনরে সাথে সম্পৃক্ত। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানানো হয় এ নদী দিবসে।
মোংলা নদীর মামার ঘাটে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মোংলার আহ্বায়ক মো। নূর আলম শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহি অফিসার কমলেশ মজুমদার। এছাড়া জালিবোট সমিতির সভাপতি এইচ এম দুলাল, বাপা নেতা আব্দুর রশিদ হাওালাদার, নাজমুল হক, কমলা সরকার, শেখ রাসেল, ট্যুরিস্ট লঞ্চ এ্যাসোসিয়েশনের মোঃ এমাদুল, মাঝিমাল্লা সমিতির মোঃ হাসেনম সহ আরো অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তৃব্যে উপজেলা নির্বাহি অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন, সরকার টেকসই উন্নয়ন কর্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নদী-খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলছে। মোংলা উপজেলায় যতগুলো প্রবাহমান সরকারি খাল দখল করা হয়েছে তা উচ্ছেদের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে, যা উম্মুক্ত করা হবে এখানকার সকল মানুষকে নদ-নদীর পরিবেশ ফিড়িয়ে দেয়া হবে বলেও জানায় উপজেলার এ কর্মকর্তা।
কোমল মতি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের অভিনব প্রতিবাদের প্রতি নজর দিয়ে নদ-নদী দখল ও দুষন থেকে রক্ষা করবে সরকার এমনটাই দাবী সচেতন মহলের।