শনিবার , নভেম্বর ২৩ ২০২৪

কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা না গেলে দেশের কৃষির উন্নয়ন হবে না -কৃষিমন্ত্রী

গাজীপুর সংবাদদাতা: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, বলেছেন, ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌছে দেয়ার মাধ্যমে তাদের আয় বাড়াতে হবে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা না গেলে দেশের কৃষির উন্নয়ন হবে না। আমরা বলছি দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু আমাদের শুধু দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে হবে না, অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল এবং ৫-৭ হাজার কোটি টাকার ডাল আমদানি করতে হয়। আমরা আগামী ৪ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ভোজ্য তেলের উৎপাদন ৪০% বাড়াতে চাই। এতে আমাদের প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বারি’র কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০২২’ এর উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের অনেক উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু এসব প্রযুক্তির অধিকাংশই কৃষকের কাছে সেভাবে পৌছায়নি। তাই দেশের কৃষির উন্নয়নে এসব জাত ও প্রযুক্তি দ্রুততর সময়ের মধ্যে কৃষকের কাছে পৌছে দিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বারি উদ্ভাবিত যেসব গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদন হচ্ছে তা খুবই উন্নত মানের। আমরা সারা বছরব্যাপী টমেটোর উৎপাদন করতে চাই। এটা করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশে টমেটো রপ্তানি করতে পারবো। তিনি বলেন,  প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এটা ধরে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের  সচিব (রুটিন দায়িত্ব)  মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, দেশে দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই আমাদের যেসব উদ্ভাবন আছে তা দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এটা করতে পারলে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আমরা যদি ধানের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে পারি তাহলে অন্য ফসল চাষের জন্য অধিক জমি পাওয়া যাবে। এতে করে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, দেশে যেহেতু কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে তাই আমরা আমাদের অব্যবহৃত জমি কাঝে লাগাতে চাই। বিশেষ করে হাওর, চরাঞ্চল, লবণাক্ত ও বরেন্দ্র এলাকায় আমরা আমাদের ফসলের উৎপাদন বাড়াতে চাই। আমরা দুই ধানের মাঝের সময়ে অন্য ফসল করতে চাই। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় আমরা ডাল ও তেল ফসলের উৎপাদন বাড়াতে চাই। এতে করে যেমন কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে তেমনি কৃষকের আয় বাড়বে। সার্বিকভাবে দেশের কৃষিতে উন্নয়ন সাধিত হবে।

গত অর্থবছর যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশন সমূহ আগামী ১৩-১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এই গবেষণা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা। প্রথমে আঞ্চলিক পরে অভ্যন্তরীণ ও সবশেষে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে গত বছরের গবেষণা কার্যাবলীর বিশ্লেষণ ও পরবর্তী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে যে কারণে এই কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সেই আলোকে গবেষণা কার্যক্রম প্রণীত হয়। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা বারি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ বর্তমানে ২১১টি ফসল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বারি বিভিন্ন ফসলের ৬২৫টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৬১২টি উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১,২৩৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, গম, সবজি, মসলা এবং ফল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূচি গ্রহণ করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক  আ. গাফ্ফার খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক  মো. বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান। বারি’র গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্যের উপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম।

কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের সদস্যবৃন্দ, বারি’র অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার তথা পলিসিমেকার, জনপ্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও কৃষিসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

This post has already been read 2712 times!

Check Also

নরওয়ের সাথে সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান নৌপরিবহন উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: নরওয়ের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট …