নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি শতাব্দীতে মানব ও অন্যান্য প্রাণিস্বাস্থ্যের জন্য এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বিশ্ববাসীর জন্য অন্যতম দুঃশ্চিন্তার কারণ। সারাবিশ্বের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীগণ তাই চেষ্টা করছেন কীভাবে এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নামক মহাবিবিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এন্টিবায়োটিকের বিকল্প কোন সমাধান খুঁজছেন সবাই। এক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে মুক্তি পেতে ব্যাকটেরিওফেজ হতে পারে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প সমাধান যা কেবল টার্গেটকৃত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত কোম্পানি CTC Global উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত Xcelsio নামক ব্যাকটেরিওফেজ যা বাংলাদেশে MAS Additives বাজারজাত করছে সেটি দেশে নিরাপদ পোলট্রি মাংস ও ডিম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুস্থ্য সবল জাতি গঠন এবং দেশের পোলট্রিজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যাকটেরিওফেজ নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ‘A New Era of Bacterial Control & Gut Balancing’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব কথা বলেন উপস্থিত বক্তাগণ। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ফিড এডিটিভস কোম্পানি সিটিসি গ্লোবাল (CTC Global) ও দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতের স্বনামখ্যাত কোম্পানি এমএএস এডিটিভস (MAS Additives) যৌথভাবে উক্ত সেমিনারের আয়োজন করে। মূলত Xcelsio নামক ব্যাকটেরিওফেজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছিল সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য। এতে দেশ বিদেশের পোলট্রি বিশেষজ্ঞ, পুস্টিবিদ, বেরসরকারি উদ্যোক্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এমএএস এডিটিভস এর প্রধান নির্বাহী ডা. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ ভোক্তারা এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর ব্যাপারে এখন অনেক বেশি সচেতন। তাই বড় বড় পোলট্রি উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সাধারণ খামারিগণ নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনে মনোনিবেশ করছেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা Xcelsio নামক ব্যাকটেরিওফেজটি বাজারে নিয়ে এসেছি। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পোলট্রি উৎপাদনে আমরা (MAS Additives) গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চাই। Xcelsio তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে দেশের উদ্যোক্তা ও খামারিদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি করে নিবে; সেই সাথে নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদন ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রোধে Xcelsio সম্ভাবনার দূয়ার খুলবে, বলে আমাদের বিশ্বাস।
সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক এম. বাহানুর রহমান (পিএইচডি) বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক যতটা না সমস্যার সমাধান করে তারচেয়েও বেশি সৃষ্টি করে, যার ফলাফল এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স।
এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বন্ধে অধ্যাপক এম. বাহানুর রহমান মানুষ ও প্রাণিতে এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার রোধ, সঠিক সময়ে ভ্যাকসিনেশন ও প্রোবায়োটিকের ব্যবহার, পোলট্রিতে ব্যাপকভাবে ব্যাকটেরিফেজ এর ব্যবহার, এন্টি মাইক্রোবায়াল ন্যানোপার্টিক্যালস এর ব্যবহার, এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির পরামর্শ দেন।
সেমিনারে Xcelsioপণ্যটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন CTC Global এর সেলস ডিরেক্টর ডা. সেলিব লি (Caleb Lee, DVM, Sales Directoc). তিনি জানান, ব্যাকটেরিওফেজ কেবলমাত্র টার্গেটকৃত ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে বলে, এটির অপর নাম Bacteria Eater বা ব্যাকটেরিয়া ভক্ষক। এটি স্যালমোনেলা, ই-কোলাই, ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেন ও স্ট্যাফিলোকক্কাসের মতো চারটি ব্যাকটেরিয়া গ্রুপের ১৮টি স্ট্রেইন প্রতিরোধ করতে কার্যকর। এটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে যেমন কাজ করে, তেমনি প্রিবায়োটিক এবং সালমোনেলা কিলার রিপ্লেসার হিসাবে কাজ করে।
“এটি ব্যবহারে কোন ধরনের রেজিস্ট্যান্স হওয়ার সম্ভাবনা নেই। Xcelsio একদিকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে, অপরদিকে উপকারি ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি তাপ ও পিএইচ স্থিতিশীল’ – যোগ করেন ডা. লি।
সেমিনারে CTC GLOBAL-এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. ম্যাক্স ওহ (Max H. Oh, DVM, PhD, Senior Consultant) ’Fundamental of Bacteriophage’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ব্যাকটেরিয়া সমস্যা সমাধানে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত টেকনিক্যাল পেপার শেষে আগত অতিথিদের প্রতিটি প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দেন CTC GLOBAL বিশেষজ্ঞগণ।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে M.A.S Additives-এর জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. হামিদুল্লাহ, জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ম্যানেজার (অপারেশন) মো. বাদল হোসেন, বিজনেস ম্যানেজার ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নুর মোহাম্মদসহ কোম্পানির উদ্বোধন উদ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।