চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: ২০১৫ সাল থেকে এমডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে হলেও অতিদরিদ্র মানুষের হার কমে আসছিল। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপি কোভিড-১৯ এর আঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং বিগত ৭ মাস ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জ্বালানী সংকটের ফলে সাপ্লাই চেইন নষ্ট হওয়ায় খাদ্যসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে অন্যান্য অনেক দেশের মত আমাদের দেশেও ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রান্তিক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারী ও শিশু। নিন্মবিত্তসহ মধ্যবিত্তের অনেকে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনায় তীব্র সমস্যায় পড়েছেন। এর প্রভাবে আমাদের দেশেও বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও অসমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৬ অক্টোবর ২০২২ বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযপান উপলক্ষে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-চট্টগ্রাম জেলা ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে নগরীর সার্কিট হাউজ চত্বরে গণজমায়েত ও মানব বন্ধনে উপরোক্ত মন্তব্য করা হয়।
মানববন্ধন ও গণজমায়েত এ সংহতি জানান ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সহ-সভাপতি হাজী আবু তাহের, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোঃ জানে আলম, ক্যাব মহানগরের জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব জামাল খানের সালাহ উদ্দীন আহমদ, নারী নেত্রী ঝর্না বড়ুয়া, ক্যাব সদরঘাটের শাহীন চোধুরী, ক্যাব বন্দরের আলমগীর বাদসা, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের আবু হানিফ নোমান, সিএসডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী শম্পা কে নাহার, ক্যাব যুব গ্রুপের আমজাদুল হক আয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সুজন, প্রচার সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম, সদস্য করিমুল ইসলাম, রাশিদা বিনতে ইসলাম প্রমুখ।
জমায়েতে আরো জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বছরে মোট ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ফলে ২০১৭ সালে ১০০ টাকা দিয়ে যে পণ্য কেনা যেত ২০২১ সালে এসে সেটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১৩১ টাকা ৪১ পয়সা। কিন্তু টিসিবি পণ্যমূল্যের যে তথ্য দিচ্ছে এবং আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবন-যাপনের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি, সরকারি ডেটার চেয়ে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। বিবিএস সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে, দেশে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮% যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০% পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি এখন অনেক বেশি যা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু শহরাঞ্চলে নয়, দেশজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়-যেমন জ্বালানি তেল, রান্নার চুলার গ্যাস, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, বিদ্যুৎ, গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে।
দাবিগুলির মধ্যে আছে; সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং কর্মসূচিতে আর্থিক ও খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, প্রান্তিক, শ্রমজীবী ও নিন্মবিত্ত মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে; সে জন্য চাল, আটাসহ সকল নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বর্তমানে চাল আমদানির ওপর ৩১% কাস্টমস ডিউটি রয়েছে। খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ও কাস্টমস ডিউটিসহ সব ধরনের শুল্ক তুলে দেয়া, মূল্যের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পাইকারি ও খুচরা উভয় ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বাজার তদারকি নিশ্চিত করা ও দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘মূল্য কমিশন’ গঠনের জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করা। দাবিগুলি বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্ঠি আকর্ষন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দীন ও জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম এর পক্ষে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বদিউল আলমের নিকট স্মারকলিপি দাখিল করা হয়।