শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

শেখ রাসেল হত্যার নিষ্ঠুরতা সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদাদাতা: শেখ রাসেল হত্যার নিষ্ঠুরতা পৃথিবীর সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল মিলনায়তনে শেখ রাসেল দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম (এমপি) এ মন্তব্য করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করে।

মন্ত্রী আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু তাদের পরিবারের কাউকে হত্যা করা হয়নি। সে সব হত্যাকান্ডে কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী বা শিশুকে হত্যা করা হয়নি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা এতোটাই নিষ্ঠুর আর বর্বর ছিল যে তারা শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, ভাই, সন্তান, এমনকি তাঁর পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী সদস্যকেও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছিল। শেখ রাসেলের মতো নিষ্পাপ শিশুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ বর্বরতা কারবালার বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন খুনিদের হিংস্রতা ও পরিকল্পনা ভয়াবহ ছিল। এমন নারকীয় উন্মত্ততায় তারা মেতে উঠেছিল যে ফুলের মতো একটা নিষ্পাপ শিশুকেও হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, শেখ রাসেলের হত্যাকারীরা বাংলাদেশের মানুষ। তারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে, যে রাষ্ট্র জীবনের চৌদ্দটি বছর কারা অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধু উপহার দিয়েছিলেন। যে রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শিশু রাসেলকে বাবার স্নেহ দিতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন করে দিয়েছিলেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন, আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এটাই কি বঙ্গবন্ধুর অপরাধ? পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করল তারাই যাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সাধনা ছিল।

শিশু রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করা যাবে না, এই আইন জিয়াউর রহমান পাশ করেছিল। শুধু এখানেই শেষ নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকারীদের এদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসন করা হয়েছিল। এই বর্বরতা আমরা কোথায় রাখবো? এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখবো? এভাবেই বাংলাদেশে বেদনার্ত অধ্যায় একের পর এক সৃষ্টি হয়েছিল।-যোগ করেন মন্ত্রী।

শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, জাতির জনক ও তার শিশুপুত্র রাসেলকে হত্যার কলঙ্ক কোনদিন মুছবে না। এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের ও সুবিধাভোগীদের আজও বিচার হয়নি। শিশু রাসেলের আর্তনাদ আমাদের চিরদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা যেন আবার কোন ষড়যন্ত্রের শিকার না হন। ভবিষ্যতে কোন শিশু যেন আবার নিষ্ঠুরতার শিকার না হন সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, এ টি এম মোস্তফা কামাল ও মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি ডা. মো. মনজুর কাদির। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বলেন, শেখ রাসেল হয়তো জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার উত্তরাধিকার হতে পারত। শেখ রাসেলকে হত্যা ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ। একটি শিশুর এরকম করুণ মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আর কোন শিশুর যেন এরকম করুণ পরিণতি না হয়।

আলোচনা সভা শেষে শেখ রাসেলসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সকল শহিদ এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ভবনে স্থাপিত শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মন্ত্রী।

এদিন সকালে শেখ রাসেল দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় সচিবালয়ের নিজ দপ্তর কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রী।

 

This post has already been read 1792 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …