মুহাম্মাদ সজল: সর্বোচ্চ কয়টা ডিম কুসুমসহ খাওয়া যাবে, এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। ডিমের কুসুম নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হয় মূলত কুসুমে থাকা কোলেস্টেরলকে কেন্দ্র করে। একটা বড় ডিমে গড়ে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। এখন আপনি ডিম খান আর না খান, আমাদের শরীর প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল তৈরি করবেই।
অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষনাপত্র যারা পড়েন, তাদের জানা থাকার কথা, ডিম বা কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খেলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা মাত্র ৭ ঘন্টার জন্য বাড়ে। এরপর শরীর কোলেস্টেরল হোমিওস্ট্যাসিসের মাধ্যমে সেটাকে আগের মাত্রায় নিয়ে আসে।
আপনি যদি কোলেস্টেরল জাতীয় কোন খাবার নাও খান, আমাদের লিভার এবং লার্জ ইন্টেস্টাইন(মেইনলি গাট মাইক্রোব্যাকটেরিয়া) এই ১০০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল তৈরি করবে।, কারন আমাদের শরীর চালাতে এটুকু কোলেস্টেরল লাগেই।
এখন, ডিম খেলে কোলেস্টেরল কখন বাড়ে আর কখন বাড়ে না, এটা বুঝিয়ে বলি।
ডিমের কুসুমে মূলত বাড়ে এইচডিএল। কিন্তু যদি আপনি নিয়মিত ডিমের সাথে চিনি/রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খান এবং উচ্চতাপে সয়াবিন/এজাতীয় আর্টিফিসিয়াল তেলে রান্না/ভাজা খাবার রাখেন, তাহলে ডিমের কোলেস্টেরল গ্লাইকেটেড হয়ে যাবে এবং গ্লাইকেটেড ফ্যাট শরীরের ভেতরে ইনফ্ল্যামেশান বাড়াবে। এই ইনফ্ল্যামেশান ম্যানেজ করতে আপনার শরীর বাড়তি ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল তৈরি করবে।
পক্ষান্তরে আপনি যদি প্যালিও/লো কার্ব ডায়েটে থাকেন এবং রিফাইন্ড অয়েল/স্টার্চ/সুগার ব্যবহার না করে শুধু ডিম খান, আপনার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল লেভেল বাড়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম, শুধু বাড়বে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল।
যদি আপনি চিনি-প্রচুর ভাত-রুটি সমৃদ্ধ ডায়েটে থাকেন, সয়াবিন তেল খান নিয়মিত, তাহলে ডিম না খেলেও আপনার কোলেস্টেরল-বিশেষভাবে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়বে। পক্ষান্তরে, লো কার্ব বা প্যালিওতে থাকলে দিনে ৪-৬টা ডিম খেতে সমস্যা নেই।
যারা হেভি লিফটিং করেন বা এলিট এথলিট, তারা দিনে ৮-৫০টা ডিম খান, কুসুমসহ ১৫-২৫টা ডিম পর্যন্ত খান কেউ কেউ।
এন্ড অফ দ্যা ডে, কথা হচ্ছে, শুধু ডিম খেয়ে কারো হার্ট এটাক, স্ট্রোক বা হাই ব্লাড প্রেসার হয় না।
ডিমের কুসুমের সাথে কোলেস্টেরল বাড়ার যে হাইপোথিসিস, ঐটা এখন ইনভ্যালিড হয়ে গেছে।
লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট।