এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবুর জন্মদিন আজ। ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকার নটর ডেম কলেজের পাঠ চুকিয়ে পড়াশোনার জন্য ১৯৭৮ সালে বিদেশ যান। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরেন ১৯৮৪ সালে। শুরু করেন ব্যবসা। ইমপ্রেস গ্রুপের তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ব্যবসায়িক পরিচয় ছাপিয়ে দেশ-বিদেশে তিনি প্রকৃতিবন্ধু নামেই সমধিক পরিচিত।
জন্মভূমির প্রতি আজন্ম ঋণই তাঁকে করে তুলেছে প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি দূষণমুক্ত সুস্থ-সুন্দর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা বাংলাদেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। ২০১০ সালে প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক গণসচেতনতা সৃষ্টিতে চ্যানেল আইতে ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’ শুরু করেন।
মুকিত মজুমদার বাবু নিয়মিত লিখছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিকে। প্রতিবছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর প্রকৃতিবিষয়ক বই। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছেÑ ‘আমার অনেক ঋণ আছে’, ‘আমার দেশ আমার প্রকৃতি’, ‘আমার রূপসী বাংলা’ ‘সবুজ আমার ভালোবাসা’, ‘স্বপ্নের প্রকৃতি’, ‘সবুজে সাজাই আমার বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রকৃতিবার্তা’র সম্পাদক ম-লীর সভাপতি তিনি। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন মুকিত মজুমদার বাবু ও তাঁর প্রতিষ্ঠান। বন্যপ্রাণী অবমুক্তকরণ, প্রতিবছর বিশ^ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ, দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতিবিষয়ক তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, প্রজাপতি পার্ক প্রতিষ্ঠা, পরিবেশবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক, পরিবেশ সংরক্ষণ বিভিন্ন কর্মশালা, পাখিশুমারি ও পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণ, মহাবিপন্ন বড় কাইট্টা কাছিম প্রজনন ও সংরক্ষণ, বিপন্ন শকুন সংরক্ষণ, শিকারি পাখি গবেষণা ও সংরক্ষণ, বন বিভাগের সঙ্গে ‘সুফল’ -এর কার্যক্রম, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গাছের পরিচিতি ফলক সংযুক্তিকরণ, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া, পরিবেশ সচেতনতামূলক স্কুল প্রোগ্রাম, প্রকৃতিপল্লী প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশ সংরক্ষণে শহুরে মানুষের ভেতর প্রকৃতির অমূল্য অবদানের কথা তুলে ধরছেন চ্যানেল আইয়ে প্রকৃতি মেলার মাধ্যমে। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর দেশের একজন গবেষককে দেয়া হচ্ছে ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’।
তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি করতে দেশব্যাপী গড়ে তোলা হয়েছে ‘প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব’। স্থানীয়রা এ ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখবে।
প্রকৃতিবান্ধব কাজের পাশাপাশি মুকিত মজুমদার বাবু দেশব্যাপী মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। দুঃস্থদের আর্থিক সাহায্য, শীতে কম্বল বিতরণ, স্কুলের বাচ্চাদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করছেন। এছাড়া বন্যার্তদের ওষুধ ও ত্রাণ বিতরণ, করোনাকালে বিভিন্ন জেলায় ওষুধসহ মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি পাঠানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে প্রশংসিত হয়েছেন।
পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু ও তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১২’, ‘বঙ্গবন্ধু এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৩’, ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫’, ‘এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট এ্যাওয়ার্ড-২০১২’, ‘ঢাকা আহছানিয়া মিশন চাঁদ সুলতানা পুরস্কার-২০১৫’, ‘ফোবানা এ্যাওয়ার্ড ইউএসএ-২০১৬’, ‘বিজনেস এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪’, ‘পল্লীমা গ্রিন স্বর্ণপদক-২০১৭’, ‘এ ফ্রেন্ড অব নেচার-২০২১’ সহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন।