রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

প্রচলিত সাইলেজ ধারনাই পাল্টে দিবে ‘রুপাই সাইলেজ’!

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে গবাদিপশুর খাবার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঘাস, খড় ও দানাদার। কিন্তু প্রচলিত এসব খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা। দানাদার খাদ্যের মাধ্যমে উৎপাদিত দুধের দামের সাথে উৎপাদন খরচ মেলাতে খামারিগণ এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ভুট্টার সাইলেজ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা যাবে। বর্তমানে পশুখাদ্যের মূল্য অত্যাধিক বেড়ে যাওয়াতে খামার টিকিয়ে রাখতে হলে সাইলেজই হতে পারে একমাত্র সহজ সমাধান। অন্যদিকে বাজারে প্রচলিত ভুট্টার সাইলেজে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্যাকিংয়ের অভাবে গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখা কঠিন বিধায় খামারিগণ কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে এগ্রো একরস্ লিঃ উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত  ’সুষম পুষ্টি, খামারির সন্তুষ্টি’ স্লোগানে নিয়ে আসা ‘রুপাই সাইলেজ’  বাজারে প্রচলিত সাইলেজ সম্পর্কে ধারনাই পাল্টে দিবে। প্রতিকেজি ‘রুপাই সাইলেজ’ -এ রয়েছে ৮-১০%  প্রোটিন ও প্রায় ৩৫% পর্যন্ত ড্রাই মেটার। ফাইন চপিং কোয়ালিটির জন্য এটি পশুর হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং খাদ্য অপচয় হ্রাস করে। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট। ‘রুপাই সাইলেজ’   ব্যবহারের ফলে গবাদিপশু পালনের লুকায়িত খরচ (হিডেন কস্ট) যেমন কমায় এবং কাঁচাঘাসের মতো এতে নাইট্রেট বিষক্রিয়ার কোন ঝুঁকি নেই। এই ভুট্টার সাইলেজ তৈরিতে বিশেষজ্ঞদের অধীনে সম্পূর্ণ চাষ প্রক্রিয়া এবং সঠিক মিল্কিং স্টেজে হারভেস্টিং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়ন করা হয়।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আটিবাজারে (সাবেক সিনেমা হল, আটি মডেল টাউন, আটি বাজার) ‘রুপাই সাইলেজ’ -এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপস্থিত বক্তাগণ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন -এর সভাপতি এবং সাদিক এগ্রো’র স্বত্বাধিকারী মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘রুপাই সাইলেজ’ -এর যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো- এত বড় একটি কর্পোরেট হাউজ আমাদের সেক্টরে এসেছে যা দেশে টেকসই এগ্রো সেক্টর গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ‘রুপাই সাইলেজ’-এর কোয়ালিটি আমি দেখেছি, এই সাইলেজের টেক্সার, অ্যারোমা, ময়েশ্চার আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ‘রুপাই সাইলেজ’ ব্যবহারে দুধ ও মাংস উৎপাদনকারী উভয় প্রকার গরুর জন্যই দারুন ফলদায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও ঢাকার আশেপাশের খামারি যাদের কাঁচা ঘাসের অপ্রতুলতা আছে, তাদের জন্য ‘রুপাই সাইলেজ’ হবে বেস্ট অল্টারনেটিভ/ বড় সম্ভাবনা।

বিশিষ্ট ডেইরি ও পোলট্রি কনসালটেন্ট এবং বিসিএস লাইভস্টক একাডেমি’র সহযোগি অধ্যাপক কৃষিবিদ মো. সফিকুর রহমান (পিএইচডি) বলেন, উন্নত মানের সাইলেজ তৈরির জন্য মূলত দুটো জিনিস লাগে এবং সেগুলো হলো- সঠিক এরবেটিক কন্ডিশন ব্যবস্থা এবং ময়েশ্চার (আর্দ্রতা) ঠিক রাখা। বায়ূনিরোধক ব্যবস্থা ঠিকমতো না হলে সাইলেজের ভেতরে যে কার্বোহাইড্রেট থাকে সেগুলোতে ফাঙ্গাস তৈরি হয়, যেটি খামারির হিডেন কস্ট বাড়িয়ে দেয়। সাইলেজ প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে রুপাই যে এয়ারটাইটনেস করে এ প্রক্রিয়াটি অন্য কেউ করতে পারে না; কারণ, অন্যদের কাছে সেই টেকনোলজি এবং অভিজ্ঞ কর্মী নেই। এছাড়াও এই সাইলেজে এন্টি ফাংগাল ইনোকুল্যান্ট ওয়ার্ল্ড বেস্ট কাম্লেক ব্যবহার করা হয়। ফলে রুপাই সাইলেজ -এ ফাংগাস বা মল্ড পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

সফিকুর রহমান বলেন, আরেকটি বিষয় হলো সাইলেজ তৈরির জন্য কাঁচা ঘাসে ৮০ শতাংশ পানি থাকে; এই পানিকে যদি কমিয়ে ৬৫ শতাংশে না আনা যায়, তবে সাইলেজের কোয়ালিটি ভালো হবে না। রুপাই সাইলেজে ৬৫ শতাংশের নিচে আর্দ্রতা থাকে যা খামারিদের জন্য নিঃসন্দেহে উপকারী।

কেরাণীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনছুর আহমেদ বলেন, আমরা গবাদিপশুকে যে কাঁচা ঘাস খাওয়াই সেগুলোতে অনেক সময় রোগ জীবাণূ যেমন থাকে, তেমনি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে; কিন্তু সাইলেজ এসব সমস্যা ও অভাবগুলোর সমাধান হতে পারে। গরুকে সঠিক সময়ে টিকা প্রদান, কৃমিনাশক খাওয়ানো ছাড়াও সাপ্লিমেন্ট হিসেবে সাইলেজ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডা. মনছুর বলেন, আটিবাজার রাজধানীর একটি ডেইরি বেল্ট, এখানকার খামারিগণ অনেক সময় কাঁচাঘাসের অভাবে গরুকে কচুরিপানা প্রদান করেন, কিন্তু কচুরিপানাতে পানি ছাড়া তেমন কিছুই থাকে না। অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে দানাদার খাদ্যের দামও অনেক যা উৎপাদন খরচকে বাড়িয়ে দেয়। তাই, আমাদের দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাঁচাঘাস ও ভুট্টার সাইলেজ হতে পারে বিকল্প সমাধান, যা খরচ সাশ্রয়ী। এর ফলে খামারিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দুধের পুষ্টিমান ঠিক থাকবে ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

এগ্রো একরস্ লিঃ -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, বাংলাদেশের ডেইরি খামারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গো-খাদ্য। দুধ কিংবা মাংস উৎপাদনের ৭০ শতাংশ ব্যায় হয় খাদ্য বাবদ। গরুর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ঘাস। কিন্তু এই ঘাসের অপ্রতুলতার জন্য আমাদের অনেক খামারি দানাদার খাদ্য থেকে শুরু করে, কুঁড়া, ভূসি, কচুরিপানা, এমনকি তুলা পর্যন্ত খাওয়ান; এতে করেও উৎপাদন খরচ কমানো যায় না। অন্যদিকে দানাদার খাদ্যের দামও বেশি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলোর দাম আরো অনেক বেশি বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও একটি ডেইরি ফার্ম আছে এবং শুরু থেকেই গরুকে সাইলেজ খাওয়াই। কিন্তু বাজারে প্রচলিত সাইলেজগুলো থেকে আমি কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাচ্ছিলাম না; এক সময় নিজেই সাইলেজ তৈরি করি এবং গুণগত মান (কোয়ালিটি) ঠিক রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি। একটা সময় লক্ষ্য করলাম সাইলেজের কোয়ালিটি যদি ঠিক রাখতে হয়, গাছের সঠিক সময় মিল্কিং স্টেজে হারভেস্টিং যদি ঠিক রাখতে চাই; তবে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে সবগুলো জমির গাছ হারভেস্ট করে ফেলতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে সাইলেজ উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর জমির প্রয়োজন হয়, নয়তো উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। আমাদের ‘রুপাই সাইলেজ’ উৎপাদনের জন্য চলতি বছরে সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে এবং সেই বিশাল পরিমাণ জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা গাছ উল্লেখিত সময়ের মধ্যে প্রচলিত পদ্ধতিতে হারভেস্ট করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন ইউরোপীয় মেশিন বা টেকনোলজির কোন বিকল্প নেই।

‘সাইলেজের গুণগত মান ঠিক রাখা, টেকসই ব্যবসা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য তাই আমরা জার্মানি থেকে ক্লাস জাগুয়ার-৯৫০ কর্ণ ক্রাশিং হারভেস্টর নিয়ে এসেছি, যা বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং সর্বোত্তম সাইলেজ হারভেস্টর। ক্লাস জাগুয়ার-৯৫০ কর্ণ ক্রাশিং টেকনোলজি হারভেস্টর আমাদের সেই অসম্ভব কাজটিকে যেমন সম্ভব করে দিয়েছে, সেই সাথে সাইলেজের গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে কর্তন সময় বেঁচে যাওয়ার কারণে আমাদের কৃষকরা তাদের জমিতে একাধিক ফসল রোপন করতে পারছেন। ক্লাস জাগুয়ার-৯৫০ কর্ণ ক্রাশিং টেকনোলজি হারভেস্টরের বিশেষত্ব হলো- এটি সাইলেজের ইউনিফর্ম চপিং কোয়ালিটি আন্তর্জাতিক মানের হয় এবং উৎপাদন খরচ কমায়’ -যোগ করেন আমিনুর রহমান।

তিনি আরো বলেন, সাইলেজে থাকা ভুট্টার দানাগুলো যদি আস্ত কিংবা আধা ভাঙ্গা থাকে তবে ভালো কোয়ালিটির সাইলেজ বলা যাবে না। আমাদের ‘রুপাই সাইলেজ’ এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো- এর মধ্যে থাকা প্রতিটি ভুট্টার দানাকে পিষিয়ে রসগুলো বের করে ফেলা হয়। এর ফলে সাইলেজের কোয়ালিটি বৃদ্ধি পায়। আমাদের সাইলেজ যেসব খামারি একবার ব্যবহার করেছেন, তারা অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এগ্রো একরস্ লিঃ -এর হেড অব সেলস মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, সেলস অ্যান্ড কাস্টমার অ্যাকুইজিশন ম্যানেজার মো. জাহিদ হোসেন প্রমুখ। এগ্রো এক্রেস লিমিটেড -এর মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার মো. মঈনউদ্দিন পাভেল, কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও কেরাণীগঞ্জের প্রায় ৫ শতাধিক ডেইরি খামারি এতে উপস্থিত ছিলেন।

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: ০১৩২৪৭৩১৮৪৯

This post has already been read 8650 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …