মো. আমিনুল ইসলাম (রাজশাহী) : সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। গোদাগাড়ী উপজেলার মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। দুচোখ যেদিকে যায়, সে দিকে শুধু মনজুড়ানো সরিষা ফুলের দৃশ্যের দেখা মেলে। গাঢ় হলুদ সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুন গুন করছে। চলছে মধু আহরণের পালা। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। এখন শুধু দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে।
সরিষার দাম ও তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকেছে সরিষা চাষে। চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন বেড়েছে সরিষার চাষ।
গোদাগাড়ী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবুল হোসেন বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তেলের চাহিদা মিটাতে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সরিষা চাষে পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরার্মশে এ উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষা চাষ। সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়, সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা, সরিষা শাকসহ সরিষা থেকে ভালোমানের তেল উৎপাদন করা যায়।
সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে, বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রাহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়। সরিষা চাষে সেচ ও সার কম লাগে। সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তেল নেয়ার পর অবশিষ্টাংশ গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে।
গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বির্স্তীণ মাঠ হলুদে ছেয়ে গেছে। কৃষক রজব মন্ডল বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তেলের চাহিদা মিটাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমরা সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি, সরিষা চাষে লাভবান হতে পারব।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২শ” ৪০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ১শ” ২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৪শ” ২০ হেক্টর । এজন্য আমরা সরিষার বীজ, সার, উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। কিছু কিছু জমিতে মধু আহরণের জন্য চাষীরা মধু সংগ্রহের বাক্স বসিয়েছেন। তেল বীজ, মধুর পাশাপাশি কৃষকরা সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরি করতে পারবেন।