নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সমিতির মূল শ্লোগান হচ্ছে- ‘জাতীয় সমৃদ্ধির স্বার্থে চট্টগ্রামের উন্নয়ন অপরিহার্য’। আঞ্চলিক সংগঠন হলেও সংগঠনটি মূলত সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথা বলে। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সমিতির রয়েছে প্রায় ১১৪ বছরের গর্বিত ইতিহাস। চট্টগ্রাম সমিতি দেশের সমগ্র জাতীয় দিবস উদযাপন, অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একে-অপরের সাথে পরিচিত করে দেয়ার সুযোগ করে দেয়।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ‘মেজবান ও মিলনমেলা-২০২২’ সম্পর্কে এসব কথা বলেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য এবং আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন খাঁন। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন জামাল এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন হিরোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্যসচিব ড. মো. আবদুল করিম, সাবেক সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। এছাড়া সরকারের সচিব, আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, বিচারপতি, আইনজীবী, চিকিৎসক, বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তাসহ নানান পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীর এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি দু’বছর পর পর চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা এ ধরনের মেজবান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। হাজার হাজার লোকের পদচারণায় এ মেজবান উৎসবের আমেজে পরিণত হয়; চেনা জানা পরিচিতি অনেকের সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায় মন খুলে কথা বলে পরস্পরের সাথে; এ যেন হয়ে উঠে ঢাকার বুকে একখন্ড চট্টগ্রাম। প্রতি বছর মেজবান ও মিলন মেলার আয়োজন করে থাকে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য চট্টগ্রামবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং চট্টগ্রাম তথা সমগ্র দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করা।
“এবারের ‘মেজবান মিলন মেলায়’ প্রায় ৪০ হাজার মানুষের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও বাইরের জেলার মানুষ যাদের সাথে চট্টগ্রামের মানুষের আত্মীয়তা ও বিভিন্নভাবে সম্পর্ক রয়েছে তারা অধীর আগ্রহে থাকেন এই দিনটির জন্য। মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে অনুষ্ঠানে প্রতীকি বলি খেলার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ৮জন বলী এ খেলায় অংশ নেন। ২০২২ সালে জব্বারের বলী খেলায় বিজয়ী জীবন বলী এখানেও অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন” – যোগ করেন গিয়াস উদ্দীন খাঁন ।
গিয়াস উদ্দীন খাঁন বলেন, কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এত বড় একটি আয়োজনে প্রত্যেকে যেভাবে সহযোগিতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য। পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময়, খাওয়া-দাওয়া, দেশের সাংস্কৃতিকাঙ্গণের অত্যন্ত পরিচিত ও প্রিয় মুখ এবং চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান সাব্বির, রন্টি দাস, শেফালি সারগাম, ফকির শাহাবুদ্দিন, ত্রিদিব মহাজন গান পরিবেশন ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র অনুষ্ঠানটি প্রাঞ্জল ও উপভোগ্যময় হয়ে উঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপভোগ্যময় করে তোলে। আমরা কে কোন মতের, ধর্মের বা বর্ণের তারচেয়েও বড় কথা আমরা চট্টগ্রামের, আমরা বাংলাদেশের -এ নীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
তিনি জানান, অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী ‘চট্টলশিখা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং প্রতিবারের মতো এবারও সমাজের নানাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচজন বিশিষ্টজনকে ‘চট্টগ্রাম সমিতি পদক’ প্রদান করা হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন:- শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (মরণোত্তর); শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু (মরণোত্তর); চট্টগ্রাম সমিতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আবু আলম চৌধুরী; ‘সাহিত্যে’ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আহমদ মমতাজ (মরণোত্তর) এবং কৃষি সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শাইখ সিরাজ-কে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে আবু আলম চৌধুরী অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। এরপর ঐতিহ্যবাহী মেজবানি খাবার দ্বারা আগত সকল অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশীয় এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল করিম, সদস্য সচিব এড. মাসুদ আলম চৌধুরী, সদস্য মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশী, সুলতান মাহমুদ, ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ, সদস্য মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও হাসপাতাল কমিটির সকল সদস্যসহ তিন কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাহী পরিষদের সকল সদস্য ও মেজবান কমিটির বিভিন্ন উপকমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও সদস্যবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাবুদ, নির্বাহী পরিষদের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলাম চৌধুরী, এএম মনসুর উল আলম, মুঃ মোহসিন চৌধুরী, মো. মহিউল ইসলাম মহিম, ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মল্লিক, রাজীবুল হক চৌধুরী, আলহাজ্ব মো. খোরশেদুল আলম, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ নাছের (নাছির), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সালাহ্উদ্দীন চৌধুরী, মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আনিচ উল মাওয়া (আরজু), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তফা ইকবাল চৌধুরী (মুকুল), শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক রাহুল বড়ুয়া, সাহিত্য ও সেমিনার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ আবছার চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক সৈয়দ আলম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আজম উদ্দীন তালুকদার, স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আলী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক আলম ইশরাক চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ডা. রেহেনা আক্তার, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. মোহাম্মদ আবুল হাশেম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য মো. গিয়াস উদ্দীন খান, নাছির উদ্দিন, নির্বাহী সদস্য এম. সাইফুদ্দিন আহমদ (বাবুল), শফিকুর রহমান শফিক, মো. তানভীর খান, এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, আবরাজ নুরুল আলম, মো. মামুনুর রশীদ রাসেল, মুহাম্মদ পিয়ারু, মো. গিয়াস উদ্দীন, পারভেজ মো. চৌধুরী, মোহাঃ আবু নাসের তালুকদার, মোহাং বদিউল আলম, মোমেন আকসা, মোকছেদ আলম মনজু, মোহাম্মদ লোকমান ফারুকী প্রমুখ।
মেজবান ও মিলনমেলা-২০২২ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আস্থা ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. ও ইব্রাতাস ট্রেডিং এর পক্ষ থেকে সমিতির নেতৃবৃন্দ, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পাঞ্জাবি ও শাড়ি এবং মেজবানে আপ্যায়নকারীদের মাঝে কোম্পানি ও সমিতির মনোগ্রাম সম্বলিত গেঞ্জি বিতরণ করা হয়।