নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত প্রায় এক যুগ ধরে বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা। ১৯৯৭ সনে সংগঠনটির যখন বাংলাদেশ শাখা’র যাত্রা শুরু হয় তখন আমরা কেবল ৩০টি স্টল নিয়ে পোলট্রি শো শুরু করেছিলাম। বর্তমানে সেটির পরিমাণ দাড়িয়েছে সাড়ে ৬শ’ স্টল, সংখ্যার দিক দিয়েও ওয়াল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখায় সদস্য সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এককভাবে আমরা যদি শুধুমাত্র ’পোলট্রি’ বিষয়টিকে বলি, তবে আমাদের পোলট্রি শো এবং সেমিনারের মান এবং সাইজ বিশ্বের যে কোন আয়োজনের সাথে কম্পিটিশন করার মতো যোগ্যতা আমরা অর্জন করেছি বলে মনে করি। কারণ, বিশ্বের অন্যান্য স্বনামধন্য শো’গুলোতে পোলট্রির পাশাপাশি প্রাণিসম্পদের অন্যান্য শাখাও বিদ্যমান থাকে। কিন্তু আমরা কেবল পোলট্রি নিয়েই এত বৃহৎ আয়োজন করে থাকি। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের একটি বড় অর্জন এবং এগুলো সম্ভব হয়েছে সকলের সহযোগিতার মাধ্যমেই।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীতে ওয়াল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় কথাগুলো বলেন সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমান।
মসিউর রহমান বলেন, শুরুতেই আমাদের স্বপ্ন ছিল এক সময় আমরা বিশ্বমানের পোল্ট্রি শো আয়োজন করবো। এসব আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের দেশের সাধারণ খামারিরাও উন্নত বিশ্বের গবেষণালব্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পকে জানতে পারবেন; আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে পারবেন। দেশের পোল্ট্রি শিল্পের চেহারা পাল্টে যাবে- এমনটাই চেয়েছিলাম।
তিনি জানান, মাত্র ৩০টা স্টল নিয়ে আইডিবি’তে মেলা শুরু হয়েছিল। এ বছর থাকছে ৬০০টি স্টল। জমা পড়েছে ১৬৭টি টেকনিক্যাল পেপার। এর মধ্যে ওরাল প্রেজেন্টেশনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ৩১টি দেশি ও ৯টি বিদেশী পেপার। থাকছে ৫২টি পোষ্টার প্রেজেন্টেশন। এছাড়াও প্লেনারী সেশনে বিশে^র নামকরা ১১জন পোল্ট্রি বিজ্ঞানী পেপার উপস্থাপন করবেন।
মসিউর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কাঁচামালের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থাই বেশ নাজুক। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ডিওসি’র দাম তলানিতে ঠেকেছে। ব্রয়লার খামারিদের অবস্থা খুবই খারাপ। ডিম বিক্রি কওে উৎপাদন খরচের টাকা আসছেনা। ফিডের কাঁচামাল কিনতেই সব শেষ, এখন তো এলসি খোলাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। ২০২৩ সাল আমাদের জন্য ধৈর্য্যের পরীক্ষা।
তিনি আরো বলেন, করোনা আমাদের হাইজিন শিখিয়েছে। খামারের হাইজিন, জীবনিরাপত্তা ঠিক রাখতে হবে। ফার্ম ডিজাইন করার সময়েই Waste Management এবং Dead Bird Disposal এর ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে হবে। এটি ছাড়া খামার করার অনুমতি দেয়া ঠিক হবেনা। গবেষণা বাড়াতে হবে, গবেষণার মানও বাড়াতে হবে। আগামী বছর হয়ত আমরা অনেকেই থাকবো না। তবে ইন্ডাষ্ট্রি থাকবে। তাই যার পক্ষে যতটা সম্ভব কাজ করতে হবে। ইন্ডাষ্ট্রিকে টেকসই করতে হবে। সেক্টরকে আরও বড় করতে হবে। অতীতে আমাদের সামনে অনেক বাধা এসেছে। আমরা বুক পেতে দিয়েছি। পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করেছি। তাই আমাদের সবাইকে একত্রে থাকতে হবে। মসিউর বলেন- তরুণদের নেতৃত্বে আসতে হবে। অন্তত: ৫০ শতাংশ পদে উদ্যমী নতুন নেতৃত্ব থাকা উচিত। চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠিতব্য ১২তম International Poultry Shwo এবং Seminar কে সফল করতে সকলের সহযোগিতা চান ওয়াপসা-বিবি সভাপতি।
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বিগত এক বছরের কার্যক্রমের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে আধুনিক পোল্ট্রি খামার, হ্যাচারি, ফিড মিল, প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠেছে তার পেছনে ওয়াপসা-বিবি’র শো’ ও সেমিনারের অনেক বড় অবদান আছে। দেশে এখন নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমে প্রিবায়োটিক ও প্রয়োবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে; ভ্যাকসিনের ওপর গুরুত্ব বাড়ছে। ইন্ডাষ্ট্রি’র বৃহত্তর স্বার্থে খামারি ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছে ওয়াপসা-বিবি। মাহাবুব বলেন, ১৪-১৫ মার্চ হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার এবং ১৬-১৮ মাচ আইসিসিবি, ঢাকায় ১২তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে। শো চলাকালে ওয়াপসা-বিবি রিসার্চ গ্রান্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। পোল্ট্রি ও কৃষি বিষয়ক মিডিয়ার অবদানকেও মূল্যায়ন করা হবে। রিসার্চ গ্রান্ট কার্যক্রমের আওতায় ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন করে এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২জন করে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীকে রিসার্চ গ্রান্ট হিসেবে প্রত্যেক কে ৫০ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে ৩৪ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদন বিষয়ে আলোচনা করেন মাহাবুব হাসান। তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফিড, ব্রয়লার মাংস ও ডিম নিয়ে অপপ্রচার আছে। এ অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে একটি গবেষণা পরিচালনার ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রী ডাঃ মো. আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এ উদ্যোগের প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বিবি’র প্রতিনিধিরা বিএআরসি এর নির্বাহী পরিচালকের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বিবি সভাপতি মসিউর রহমানও মাননীয় কৃষি মন্ত্রী’র সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং বলিষ্ঠ উদ্যোগের কারণেই সময়োপযোগী এ গবেষণাটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে থাকা বিভ্রান্তি দূর হয়েছে, পোল্ট্রি শিল্প উপকৃত হয়েচে। এজন্য মাননীয় কৃষি মন্ত্রী এবং মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাহাবুব হাসান এবং মসিউর রহমান।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সেই সাথে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন ট্রেজারার বিপ্লব কুমার প্রামাণিক।
উল্লেখ্য, ওয়াপসা-বিবি’র প্রায় দুই শত সদস্য বসুন্ধরা মডেল টাউনে অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরি, প্রফেসর ড. মো. শওকত আলী, ড. নাথু রাম সরকার, ড. মো. গিয়াস উদ্দীন, ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্ল্যা ও জাহিদুল ইসলাম, সহ-সাধারন সম্পাদক মো. ফয়জুর রহমান (ফয়েজ), নির্বাহী সদস্য ড. এবিএম খালেদুজ্জামান, মো. আসাদুজ্জামান মেজবাহ, ড. মো. আল আমীন ও শাহ ফাহাদ হাবীব, সাবেক সাধারন সম্পাদক ডা. আলী ইমাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. বিশ্বজিৎ রায়।