মাগুরা সংবাদদাতা: আমাদের এলাকার কৃষকেরা সাধারণত মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে অভ্যস্ত। তারা কখনো এ ধরনের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে অভ্যস্ত ছিলো না। তাই, আমি যখন প্রথমে এসিআই ’বিপ্লব’ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ নিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম, তখন অনেকেই আমার সাথে হাঁসি ঠাট্টা উপহাস করতো, লোকসানের ভয় দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করতো। কিন্তু আমি বিষয়টি চ্যালেন্জ হিসেবে নেই এবং জমির যত্ন করি। যখন পেঁয়াজগুলো বড় হতে থাকে, তখন অনেকের আগ্রহ তৈরি হয় এবং আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে। আমার এ জমি ইতিমধ্যে কৃষি অফিসার দেখে গেছেন। পেঁয়াজের ওজন ১৪০-১৫০ গ্রাম হয়েছে এবং প্রতি শতকে ৩ মণের বেশি ফলন হয়েছে।
মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কুদলা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কথাগুলো বলছিলেন এ প্রতিবেদককে। মজার ব্যাপার হলো, ‘যারা একদিন আমাকে নিয়ে উপহাস করতো, সেই তারাই এখন আমার পেঁয়াজ ক্ষেত দেখতে আসে, অবাক দৃষ্ঠিতে তাকিয়ে থাকে এবং এই জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি আগামী মৌসুমে বেশি করে বিপ্লব জাত চাষ করবো এবং আমাদের এলাকার অনেকেই চাষ করবে’ -বলেন মিজানুর রহমান।
কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিপ্লব পেঁয়াজের বীজ এসিআই অফিসারের কাছ থেকে পাই। অফিসার আমাকে বলেন যে, এ জাত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত বপন করা যায় এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজের দিগুন ফলন হয়। যখন আমি চারা তৈরি করে মূল জমিতে চারা লাগাই, তখন অনেকে আমাকে নিয়ে উপহাস করেছে।
গত ১৬ জানুয়ারি এসিআই সীড এর উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্বখ্যাত ইস্ট ওয়েস্ট সীড ইন্টারন্যাশনাল এর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত “বিপ্লব” এর মাঠ দিবসে এসব কথা বলেন তিনি। এতে প্রায় শতাধিক স্থানীয় কৃষক, বীজ ডিলার ও রিটেইলার অংশগ্রহণ করেন। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট সীড বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড -এর কান্ট্রি ম্যানেজার মোস্তফা কামাল।
এ সময়ে এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ মেটিক টন। সেখানে আমাদের দেশে পেঁয়াজের মোট উৎপাদন ২৫-২৬ লাখ মেট্রিক টন। ফলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্ব-নির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরো উপস্থিত ছিলেন ইউসুফ আলম, অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার, এসিআই সীড; মহিবুল্লাহ ইবনে হক, পিডিএস ম্যানেজার, ইস্ট ওয়েস্ট সীড; মোন্নাফ হোসেন, এরিয়া ম্যানেজার, এসিআই সীড; জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, ফার্ম ম্যানেজার, ইস্ট ওয়েস্ট সীড সহ কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসিআই গত ২-৩ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযোজন পরীক্ষার মাধ্যমে “বিপ্লব” নামে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গ্রীষ্মকালীন একটি পেঁয়াজের জাত নির্বাচন করে, যার হেক্টর প্রতি ফলন ৩০-৩২ মেট্রিক টন, অথচ দেশে পেঁয়াজের গড় ফলন ১০.৮২ মেট্রিক টন/হেক্টর। “বিপ্লব” উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বৃষ্টি সহনশীল জাত, যা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। জাতটি চারা লাগানোর ১০০-১১০ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। এটি রোগবালাই সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল একটি জাত যা চাষ করলে একদিকে কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোও সম্ভব হবে, দাবী করেছে এসিআই।