নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রচলিত পিলেট ক্যাটেল ফিডগুলোতে স্ট্র বা খড় মিক্সিং করা থাকে না। যে কারণে সেগুলোকে কয়েক মিনিট পানিতে রেখে গুলে নিতে হয় এবং এরপর তাতে খড় টুকরো টুকরো করে কেটে মিক্স করে গরুকে খাওয়াতে হয়। এটি একদিকে বাড়তি খরচের যেমন ব্যাপার তেমনই পরিশ্রমেরও বিষয়। তাছাড়া আমাদের দেশের অনেক খামারির একসাথে বাল্ক কোয়ানটিটির খড় ক্রয় সম্ভব হয় না, এর ফলে খড় আনা-নেয়াতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। ফলে সার্বিক হিসেবেই খাদ্য খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু TMR প্রযুক্তিতে মেশিনের মাধ্যমেই খড় মিক্স হয়ে পিলেট আকারে বের হয়ে আসবে। ফলে, খামারিদেরকে নতুন করে খড় মিক্স করার জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, টিএমআর (TMR) প্রযুক্তির ফিডে এফসিআর অনেক ভালো আসে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সাভারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক নতুন স্থাপিত টোটাল মিক্সড রেশন (টিএমআর) কারখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এগ্রিনিউজ২৪.কম কে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে টিএমআর (TMR) প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীর আবিলা (Awila) -এর একমাত্র পরিবেশক Tatco (Technology & Agro Trading Company) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি।
আলতাফ হোসেন বলেন, TMR প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফিড শুধু খরচ সাশ্রয়ীই নয়, বরং এটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ, টিএমআর পিলেট ফিড উৎপাদনে ব্যবহৃত খড়গুলোকে মেশিনের হিটিং জোনের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়; যা স্টেরালাইজেশন করে সালমোনেলা এবং ক্ষতিকর অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে নিউট্রিলাইজ করে ফেলে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত সাইলেজ এবং পাউডার ফর্মে গরুকে খাওয়ানো হয়। বিশ্বখ্যাত জার্মানির আবিলা (Awila) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এর সাথে খড় মিক্স করে পিলেটে রুপান্তর করেছে। কারণ, অফ সিজনে খড় বা প্রয়োজনীয় অনেক খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। সুতরাং এটিকে পিলেটে রুপান্তর করা গেলে সেটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে খামারিরা সারাবছরই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এটি হলো এই টেকনোলজির মূল বৈশিষ্ট এবং এটি একটি কম্পিলিড ব্যালেন্স ফিড। যেহেতু এটি একটি কম্পিলিড ব্যালেন্স ফিড, তাই এর সাথে গরুকে পানি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানোর দরকার নেই।
আলতাফ হোসেন আরো বলেন, জার্মানিতে প্রায় ৩০ বছর ধরে TMR প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে; কিন্তু আমাদের দেশে এটিই প্রথম, যা পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট হিসেবে বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা শেখ হাসিনা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো- আধুনিক, যুগোপযোগী ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুধ ও মাংসের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা। এবং এটি তখনই সম্ভব যখন গো খাদ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যাবে। TMR প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পিলেট জাতীয় ফিডের উৎপাদন খরচ নিঃসন্দেহে তুলনামূলকভাবে কম।
“এখানে আবিলা (Awila) স্পেশাল একটি টেকনোলজি মেশিনটিতে ব্যবহারে করেছে। আমি কি পরিমাণ ফাইবার ফিডে যোগ করেছি, তার একটি নির্দিস্ট দের্ঘ্য ও পরিমাণ রয়েছে। ফিডে কী পরিমাণ ফাইবার থাকলে গরুর হজম ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সে অনুযায়ী মেশিনের ফাইন টিউনিং, সেটিং, করা হয় যাতে ওই ফাইবারটা গরুর সঠিকভাবে কাজে লাগে” যোগ করেন আলতাফ হোসেন।
তিনি আরো বলেন, TMR প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। এটি আস্তে আস্তে আরো ডেভেলপ করবে। কারণ, এটির ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজগুলো আমাদের দেমে সেভাবে আপডেট হয়নি। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজগুলো আস্তে আস্তে ডেভেলপ করবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি এসএ ফিড কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে প্রযুক্তিটি গ্রহণ করেছে। অন্যান্য কোম্পানিগুলো যখন বিষয়টি সম্পর্কে আরো বেশি অবহিত হবে; তারা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তিটি ব্যবহারে অনেক বেশি উৎসাহিত হবেন। TMR জার্মানিতে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি প্রযুক্তি। আশা করি, ক্যাটল ফিড সেক্টরে খুব শীঘ্রই নতুন দ্বিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে টিএমআর প্রযুক্তি।