রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে -ড. আনসারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল, মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুর রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধি, কম সার এবং কম পানি গ্রহণ সম্পন্ন জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাণীবিদ্যা সমিতি আয়োজিত ‘২৩ তম জাতীয় সম্মেলন এবং এজিম-২০২২’ এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী। এ ব্যাপারে সরকারি বিভিন্নগবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশবিদ্যালয় ও প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে একান্তভাবে কাজ করতে হবে। গবেষণা কার্যক্রমে এসিআই কার্যকরভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা বহু জাত এবং টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি যা কৃষি খামারে ব্যবহার হচ্ছে, জানান তিনি।

‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ স্লোগান নিয়ে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নুরুল ইসলাম সুজন, এমপি। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: আকতারুজ্জামান ।

ড. আনসারী বলেন, জীববৈচিত্র্য খাদ্য সরবরাহ, কার্বন স্টোরেজ, পানি এবং এয়ার ফিলট্রেশন মতো ইকোসিস্টেমের পরিষেবাগুলির অর্থনৈতিক মূল্য বার্ষিক প্রায় ১৫০ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি; যা বিশ্বের জিডিপি’ প্রায় দ্বিগুণ (একাডেমিক গবেষণা এবং বিসিজি বিশ্লেষণ)। ইকোসিস্টেমের কার্যকারিতা হ্রাসের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিকে বছরে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। জীববৈচিত্রের এই ক্ষতি পৃথিবীব্যাপি ব্যবসার ওপর ও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই ক্ষতি মোকাবেলা করতে উৎপাদন বাড়াতে হবে উল্লেযোগ্য হারে।

“আমরা গরু প্রতি দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে দুধের চাহিদা মিটিয়েও কার্বন দূষণ কমিয়ে পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবো। বাস্তবউদাহারনস্বরুপ আমরা বলতে পারি নিউজিল্যান্ডে, ডেইরি ক্যাটল এর সংখ্যা প্রায় ৬.১ মিলিয়ন; যা থেকে প্রায় ২১.৯ মিলিয়ন মেট্রিকটন দুধ উৎপাদন হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিউজিল্যান্ডে সারা বিশ্বে দুধ রপ্তানি করে। অন্যদিকে আমাদের দেশে ডেইরি ক্যাটল এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন; এরপরও প্রচুর দুধ আমদানি করতে হয়”-যোগ করেন ড. আনসারী।

তিনি বলেন, আগামী দিনের চ্যালঞ্জের কথা বিবেচনা করে ফসল উৎপাদন ও বাড়াতে হবে। চায়নাতে হেক্টরপ্রতি চালের গড় ফলন প্রায় ৭.১ মেট্রিকটন, ভিয়েতনামে ৫.৯ মেট্রিকটন; অথচ বাংলাদেশে গড় ফলন মাত্র ৪.৬ মেট্রিকটন। তাই উৎপাদন বাড়িয়ে মাত্র ৬০ ভাগ জমিতে চাল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব; এতে করে কার্বন দূষণ কমিয়ে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে।

ড. আনসারী আরো বলেন, জীববৈচিত্র্যের টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং এর সংরক্ষণের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য। জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে একটি শিক্ষিত সমাজের বৈশ্বিক সম্মিলিত কর্মের ওপর। এজন্য তৈরি করতে হবে দক্ষ শিক্ষিত জনবল। এসব জনবল তৈরি করতে দিতে হবে গুরুত্ব। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোর্স কারিকুলামে নিয়ে আসতে হবে পরিবর্তন । জব মার্কেটের সাথে রাখতে হবে সঙ্গতি। ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়ের জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী দিনের কৃষির রুপান্তর ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীববৈচিত্র্যে সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে, লাগবে আরও প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণ। জীববৈচিত্র্যে সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্বুদ্ব করতে হবে সাধারণ জনগোষ্ঠিকে। বাড়াতে হবে সরকারের নীতিগত সহায়তা ও উৎসাহ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এসিআই -এর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে ড. আনসারী বলেন-

  • এসিআই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশে প্রথম আমন মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ৬.৫ মে.টন উচ্চফলনশীল ধানের জাত এবং বোরো মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে হেক্টরপ্রতি ৭.৫ মেটন ফলনসম্পন্ন ধানের জাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে। এছাড়াও দ্বিগুন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গমের দুটি জাত হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গবেষণা করে অবমুক্ত করেছি।
  • এসিআই প্লান্ট জেনেটিক্সের মাধ্যমে ১৩টি সবজি ফসলের প্রায় ৩৯ টি হাইব্রিড জাত, গমের ২টি, আলু ফসলের প্রায় ২১টি, হাইব্রিড ধানের ৩টি, ইনব্রিড ধানের-২টি সহ ভূট্টার- ১টি জাত অবমুক্ত করেছে; যা সারাদেশে কৃষকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
  • এসিআই এনিমেল জেনেটিক্সের আর্টিফিশিয়াল ইনসিমেনেশন সার্ভিসে গাভীর গর্ভধারণ হার প্রায় ৮০ ভাগ। এছাড়াও ফার্টাল এ্যামব্রায়ো ট্রান্সফার ও সেক্স সিমেনে সার্ভিস কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এসিআই।
  • এসিআই পোল্ট্রি জেনেটিক্স ডে-ওলড চিকস সরবরাহ করে যাতে মর্টালিটির পরিমান কম। এসিআই সরবারহকৃত ফিডে স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হিসেবে ব্লাক সোল্ডার ফ্লাই নিয়েও কাজ করছে।
  • এসিআই স্রীম্প জেনেটিক্স চিংড়ির উৎপাদনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার কথা বিবেচনা করে স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) চিংড়ি বাচ্চা সরবরাহ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
  • এসিআই ফার্টিলাইজারবিভিন্ন জৈব সার বাজারজাত করে আসছে; যা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসিআই ন্যানো ফার্টিলাইজার সরবরাহ কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে; যা ব্যবহারের ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার ৪০% কমে যাবে ।
  • প্যাকেজিং আমরা বায়ো-ডিগ্রেডেবল পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছি।

This post has already been read 2826 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …