নিজস্ব প্রতিবেদক: সাধারণ খামারিরা ভালো নেই। দীর্ঘদিনের লোকসানের কারণে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের অনেকেই ঋণের ভারে জর্জরিত। মার্কেটে পড়ে থাকা টাকা আর ফেরত পাবেন না, এই ভয়ে অনেকে ব্যবসা বন্ধ করতে পারছেন না। কিন্তু তারপরও বলবো, পোলট্রি শিল্প বাঁচাতে সাধারণ খামারিদের বাঁচাতে হবে। খামারিরা না বাঁচলে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প বাঁচবে না। আমাদের বাঁচতেই হবে, পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতেই হবে।
‘নিরাপদ প্রোটিন-সুস্বাস্থ্যের সোপান’ প্রতিপাদ্যে রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি কনভেনশন ২০২৩’ -এর সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি মসিউর রহমান এসব কথা বলেন। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতেও বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আমরা কিভাবে বাঁচবো?
মসিউর রহমান জানান, এক কেজির ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১৪০টাকা অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। ডিমের উৎপাদন খরচ ১০টাকা থেকে সাড়ে ১০টাকা অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৯ টাকায়। গত মাসেও মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৭-৮ টাকায়। ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ছেই।
পোলট্রি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ও টেকসই করার জন্য তিনি নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো ও উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার আনার পরামর্শ দেন। এছাড়াও সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব ও ওষুধ খরচ কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন।
সাধারণ খামারি এবং পোলট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য মসিউর রহমান, সারাদেশে ডিম ও মুরগির পাইকারি মার্কেট বাড়ানো; চাহিদা অনুপাতে উৎপাদনের সামঞ্জস্যতা, মহাজনদের জিম্মিদশা থেকে বের হওয়ার জন্য ক্ষুদ্র খামারিদের সহজ শর্তে লোন দেয়া সহজীকরণ, পোল্ট্রি বীমার বদলে ‘মুরগি বীমা’ চালু, ক্ষুদ্র খামারিদের বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে ফিড, বাচ্চা মুরগির ভ্যাকসিন, কিছু ওষুধ, খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ ফ্রি ডিম ও মুরগি উৎপাদনে এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কিছু মডেল ফার্ম করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খামারিদের সমবায় সমিতি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সমিতি’র মাধ্যমে কেনাকাটা করলে খরচ কম হয়। এতে করে খামারিরা সমিতির মাধ্যমে মিল রেটে ফিড এবং বাচ্চা ক্রয় করতে পারবেন, যার ফলে উৎপাদন খরচ কমবে, খামারিরা লাভবান হবেন।
ব্রয়লার মুরগির স্বাদ কমে যাওয়ার পেছনে ফিডের এফসিআর প্রতিযোগিতা ও খামারিদের অধিক প্রত্যাশাকে কিছুটা দায়ী করে মসিউর রহমান বলেন- খামারিরা চায় এমন ফিড যেটা খাওয়ালে আর কিছুই লাগবে না। অনেকটা “অমৃত সুধা”র মত। এখন বলেন- এটা কি সম্ভব? আমাদেরকে যেটা করতে হবে তাহলো ২৮ দিনে বিক্রি না করে অন্তত: ৩৫-৩৮ দিনে বিক্রি করতে হবে। তাহলেই স্বাদ আসবে, ফাইবারগুলো পুষ্ট হবে, ওজনও বাড়বে, টাকাও আসবে।
পোলট্রি শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের হুশিয়ার করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের ফিড নিয়ে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল একটি গবেষণা করেছে, আমাদের দেশের স্যাম্পল বিদেশেও পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকেও রেজাল্ট এসেছে এবং বলা হয়েছে বাংলাদেশের ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাংলাদেশের ফিড এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে নিয়ে যারা যড়যন্ত্র করেছেন এবং করছেন তাঁরা সাবধান হোন।
কিছু নিয়ম-কানুনের জালে ডিম ও মুরগির মাংসের রপ্তানি আটকা পড়ে আছে উল্লেখ করে মসিউর রহমান বলেন, রপ্তানি সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত দূর করতে হবে। রপ্তানি শুরু হলে হঠাৎ হঠাৎ করে ব্রয়লারের দাম, ডিমের দাম কমে যাচ্ছে, খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে- এগুলো হবেনা। রপ্তানিতে আমরা তখনই যেতে পারবো যখন পোল্ট্রি নীতিমালা সবাই সঠিকভাবে মেনে চলবে। পোল্ট্রি জোনিং, কমপার্টমেন্টালাইজেশন কিংবা ডেডিকেটেড ফার্ম যেটাই বলি না কেন, আন্তর্জাতিক যে নিয়ম-কানুনগুলো আছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়াও তিনি ডিম ও ব্রয়লার মুরগির লোকসান থেকে রক্ষা ও সঠিক দাম পাওয়ার জন্য উল্লেখিত পণ্য দুটি সংরক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। ‘আমরা যদি দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিম ও মুরগির মাংসের কোল্ডস্টোরেজ সুবিধা পাই, সরকার যদি এ ধরনের কোল্ডস্টোরেজ স্থাপনে ইনসেনটিভ দেয়, তাহলে খামারিরা ঝরে পড়বে না। দেশের ভেতরে ডিম ও মুরগির মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকবে এবং আমরা রপ্তানিও করতে পারবো’ -যোগ করেন মসিউর রহমান।