রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে লালমনিরহাটের কৃষকদের

রুহুল সরকার (লালমনিরহাট): নানা কারণে শ্রমজীবি মানুষ এখন শহর মুখী। ফলে কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট তীব্র হচ্ছে। কৃষিশ্রমিকের এই সংকট নিরসনে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ এর ব্যবহারে জনপ্রিয় করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

এরই ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার পৌরসভা ব্লকের পূর্ব সাপটানা এলাকায় ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ময়না জাতের বোর ধান চাষ করাচ্ছে কৃষি বিভাগ।  এই পদ্ধতিতে বীজ তলা থেকে ধানের চাড়া রোপন ও ফসল কর্তন সবকিছুই হবে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে কমবে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে ফসল উৎপাদন।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কর্মসূচির আওতায় ধান রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ।এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন,লালমনিরহাট জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. হামিদুর রহমান, অতিরিক্ত উপরিচালক (উদ্যান) আবু জাফর মো. সাদেক,  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)  জান্নাতআরা ফেরদৌস,  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম,অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মোছাঃনাহিদা আফরিন,কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার ও স্থানীয় কৃষক কৃষাণীগণ প্রমুখ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোর মৌসুমে ৫০ একর জমিতে সমলয়ে চাষাবাদের জন্য ৩০০ কেজি হাইব্রিড বীজ, ৪৫০০ কেজি ইউরিয়া, ৩০০০ কেজি ডিএপি ও ২৫০০ কেজি এমওপি সার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমলয়ে চাষের জন্য পানি দিয়ে জমি চাষ করে রেখেছে কৃষকরা। এসব জমিতে রোপন করার জন্য ৪ হাজার৫০০টি প্লাস্টিক ট্রেতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এসব চাড়ার বয়স গড়ে ২০ থেকে ২৫ দিন রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্র দিয়ে জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে ধানের চাড়া রোপন করা হচ্ছে।

সেখানে কথা হয় কৃষক সাইফুল ইসলামের (৪৫) সাথে, তিনি বলেন -কৃষি অপিস থেকি এবার মেশিন দিয়া ধান নাগে দেওচে আশা করি ভালোই হইবে। খরচ কম হলে হামরা আগামিবার নিজে করমু। একই ধারনের অভিমত ব্যাক্ত করেন রফিকুল ইসলাম(৪০) নামের আরেক জন কৃষক। সাইফুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, মেশিন দিয়া ধান নাগান টিভি দেখছি। এলা হামার জমিত ধান নাগে দেওচে কৃষি অফিস থেকি।

একটি রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে। প্রতিটি চারা একই দূরত্ব এবং সম গভীরতায় লাগানো যায়। একই সময় রোপণ করায় ধান পাকেও  একসাথে।পরে মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। কৃষি শ্রমিক দিয়ে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা।অথচ একই কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে খরচ হয় ৯ হাজার টাকার মত।এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কমছে ফসলের উৎপাদন ব্যায়।

পৌরসভা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা সরাসরি মাটিতে না করে পলিথিন অথবা প্লাস্টিকের ফ্লেপিবল ট্রেতে চারা তৈরি করা হয়। এজন্য ধান রোপনের তারিখ নির্ধারণ করে রোপণের সেই অনুযায়ী  বীজ বপন করতে হয়। প্রতি ট্রেতে ৩ :২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়।দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়।নতুন হওয়াতে কৃষকদের কাছে এই পদ্ধতি কিছুটা জটিল বলে মনে হয় তবে কৃষকদের শেখানো হয়েছে আগামীতে তারা নিজেরাই করতে পারবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন,বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক, লাভজনক এবং  টেকসই করতে  যান্ত্রিকীকরণ সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।এর একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি। যেখানে একটি মাঠের কৃষকরা সবাই মিলে ধান উৎপাদনের জন্য একই জাত নির্বাচন করবে।এবং বীজতলা থেকে শুরু করে রোপন এবং কর্তন একই সময়ে করবে।

একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর এবং উৎপাদন বৃদ্ধি হবে।ফলে ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে এতে কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে বলেও জানান তিনি।

This post has already been read 2184 times!

Check Also

জলঢাকায় সোনালী ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

বিধান চন্দ্র রায় (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। …