রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। আর স্মার্ট সিটিজেন তৈরীতে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষিত না হলে বর্তমান সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ কর্মসূচি সোনার বাংলা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। খাদ্যে ভেজালের কারণে মেধাবী ও বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। আবার খাদ্য-পণ্যের দাম অতিরিক্ত হলে মানুষ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবেন। ফলে কর্মক্ষম জাতি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ী, সরকারি দপ্তর ও ভোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি, যেরকম দরকার তেমনি সরকারি সেবা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে আরও জনমুখি করা দরকার।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নগরীর চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশন এর কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় অংশীজনের ভূমিকা বিষয়ক বিভাগীয় পরামর্শ সভায় বিভিন্ন বক্তাগণ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। মূখ্য আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক বদিউল আলম, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহিদ সিরাজ স্বপন।

ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী ও ক্যাব যুব গ্রুপের সদস্য মিনা আক্তারের সঞ্চালনায় পরামর্শ সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুস সুলতানা সীমা। আলোচনায় অংশনেন সমাজ সেবা অধিদপ্তদরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ, জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ডা. শরমিন আক্তার, বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বাবু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হাজী ছালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি আলহাজ্ব সালে আহমদ সুলেমান, ট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাক্চার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ফুলকলি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক, আলহাজ্ব এম এ সবুর প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম বলেন পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। এই মাসে ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিক্রেতারা ভেজাল ও মানহীন পণ্য বিক্রয়ে বিরত থাকবেন এবং পণ্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় রাখবেন এ প্রত্যাশা করি। দাম বাড়িয়ে ও মানহীন পণ্য বিক্রি করে মানুষের দুদর্শা বাড়ানো কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন। সিটি করপোরেশন নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা বাড়াতে প্রতিনিয়তই কাজ করছে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় ক্যাবসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সাধারণ মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারেন সে জন্য হলিডে মার্কেট ও ইফতারী মার্কেট তৈরীর চিন্তা করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য নগরী গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

মূখ্য আলোচক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সর্বসাধারনের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্ঠিতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বআরোপ করেন। কারন যারা ব্যবসায়ী, খাদ্য উৎপাদক, যোগানদাতা ও আইন প্রয়োগকারী, দিন শেষে তারাও ভোক্তা। তাই ভোক্তা হিসাবে সচেতন হলেই তারা খাদ্যে ভেজাল মিশ্রন ও মানহীন খাবার বিক্রি করা অথবা অন্য ভোক্তার অধিকার খর্ব করতে পারেন না।

পরামর্শ সভায় বক্তারা নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় তরুন প্রজন্মকে বিষয়গুলি শিক্ষা ও সচেতনতায় আরও রাস্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানান। পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্য মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদার করার আহবান জানান। গুটিকয়েক অসাধুব্যবসায়ীর কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছেন বলে দাবি করে এসমস্ত গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহবান জানান।

পরামর্শ সভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটিকর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম চেম্বার, মেট্রোপলিটন, ওমেন চেম্বার, জাতীয় ভোক্তা  অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, মৎস্য, কৃষি সম্প্রসারণ, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন, হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপুর্ন বাজার সমিতির প্রতিনিধি ও ক্যাব সদস্য/সদস্যাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।

This post has already been read 1940 times!

Check Also

বিশ্ব পোলিও দিবস উপলক্ষে রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পন্ন

রাজশাহী সংবাদদাতা: বিশ্ব পোলিও দিবস উপলক্ষে রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) …