খোরশেদ আলম জুয়েল: একটি সময় এদেশের মানুষের প্রাণিজ প্রোটিনের প্রধান উৎস ছিল নদী-নালা খাল বিলের মাছ। সেজন্য ’ভাতে মাছে বাঙালী’ প্রবাদটি আমাদের জাতিসত্ত্বার সাথে মিশে গেছে। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে; সহজলভ্য, সুস্বাদু এবং দামে সস্তা হওয়াতে মানুষ প্রাণিজ প্রোটিনের সহজ উৎস হিসেবে পোলট্রি বা মুরগিকে সাদরে গ্রহণ করেছে। ইদানিং প্রাণিজ প্রোটিনের সহজ উৎসের সেই সহজ স্থানটিতে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে হাঁস। কেবল শীতের সময়টাতেই হাঁস খেতে হবে এমন ভুল ধারনা থেকে মানুষ সরে আসছেন। ভোক্তা পর্যায়ে হাঁসের মাংসের চাহিদা বাড়ার সাথে জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠছে হাঁসের মাংসের স্বতন্ত্র রেস্টুরেন্ট।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে- আমাদের দেশে পারিবারিক বা বাণিজ্যিকভাবে যে হাঁসগুলো লালন পালন করা হয়, তার প্রায় সবগুলোই ইনব্রিড হওয়া জাত। অর্থাৎ হাঁসের অরিজিনাল ব্রিড বা মূল জাতটি আমাদের দেশে নেই। এর ফলে বাণিজ্যিকভাবে পালনকৃত হাঁসের যেমন কাঙ্ক্ষিত ওজন আসে না; তেমনি উপযুক্ত লাভ উঠে আসে না। আশা কথা হচ্ছে- বাংলাদেশে এই প্রথম ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত GRIMAUD FRERES SELECTION কোম্পানি হতে সরাসরি আমদানিকৃত প্যারেন্ট স্টক হতে উৎপাদিত ১দিন বয়সী উন্নতমানের ‘পেকিন স্টার-১৩’ জাতের হাঁসের বাচ্চা বাজারজাত করবে দেশের প্রাণিজ খাতের স্বনামধন্য কোম্পানি প্লানেট চিকস লিমিটেড। ‘পেকিন স্টার-১৩’ জাতের হাঁস ডিম ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে পালন করা যাবে।
‘পেকিন স্টার-১৩’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এগ্রিনিউজ২৪.কম এর পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদকের কথা হয় প্লানেট গ্রুপের পরিচালক শাহ ফাহাদ হাবীব এর সঙ্গে। তরুন মেধাবী এই উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে যেসব হাঁস লালন/পালন বা উৎপাদন হয়ে আসছে সেগুলোর সবগুলোই ইনব্রিডিং অর্থাৎ মূল জাত বা ব্রিড নয়। এর মূল কারণ হলো- আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত কোন অফিসিয়ালি বা কমার্শিয়ালি হাঁসের ব্রিডার ফার্ম নেই। দেশি বা বিদেশী যেই নামেই ডাকা হোক না কেন, মূলত এসব ইনব্রিডিং জাতগুলোই আমাদের দেশে মাংস অথবা ডিমের জন্য লালন পালন করা হচ্ছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে- এসব হাঁসের রোগবালাই কিংবা মর্টালিটি (মৃত্যুহার) বেশি থাকে; পক্ষান্তরে এফসিআর তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়াতে খাদ্য খরচের তুলনায় হাঁসের কাঙ্ক্ষিত ওজন পাওয়া হয় না। এর ফলে উৎপাদন খরচের তুলনায় মুনাফা করাটা খামারিদের জন্য মুশকিল হয়ে যায়। যে কারণে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁস পালনে খামারিরা সেভাবে সফল হতে পারছেন না। যে কোন প্রাণীর মূল জাত ব্রিড না থাকলে মূলত এই সমস্যাটা হয়ে থাকে।
‘পেকিন স্টার-১৩’ জাতটির মূল বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহ ফাহাদ হাবীব এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, আমরা ‘পেকিন স্টার-১৩’ ডাক নামে ফ্রান্স থেকে যে ব্রিডটি নিয়ে এসেছি সেটি শক্ত ফাইবারযুক্ত মাংসল যেমন হবে, তেমনি স্বাদেও হবে দারুন। এ জাতের হাঁস জলে ও শুকনো উভয় জায়গায় লালন পালন করা যাবে। বিশ্বখ্যাত কোম্পানির ব্রিড, আবহাওয়া উপযোগী ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হওয়াতে পেকিন জাতের হাঁসে ওষুধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ লাগবে খুবই কম। এছাড়াও খেলনা ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরীতে সাদা পালকের আর্থিক মুল্য থাকায়, বিশ্বে এই জাতের হাঁসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ‘পেকিন স্টার-১৩’ হাঁস খামারিদের ভাগ্যের দ্বার খুলে দিবে!
মি. ফাহাদ বলেন, আমরা ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘পেকিন স্টার-১৩’ জাতের হাঁসের ব্রিড নিয়ে আসছি যা মূলত অরিজিনাল ব্রিড। ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত একটি জেনেটিক কোম্পানি যারা প্রতিনিয়তই জাতের গবেষণা ও উন্নয়ন করে থাকে তাদের কাছ থেকে ‘পেকিন স্টার-১৩’ নামে হাঁসের যে জাতটি নিয়ে এসেছি, সেটি খামারিগণ ডুয়েল পারপাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ মাংস ও ডিম উভয় উৎপাদনের উদ্দেশ্যেই পালন করতে পারবেন। কেউ যদি মাংস উৎপাদনের জন্য ‘পেকিন স্টার-১৩’ নিতে চান; তবে তাকে এটি পালতে হবে মোটামুটি ৪৫দিন পর্যন্ত; এই সময়ে হাঁসের গড় ওজন আসবে প্রায় ৩ কেজি, এফসিআর আসবে ১.৯-২। বর্তমানে আমাদের দেশের বাজারে লাইভ ওয়েটের হাঁসের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ২৮০-২৯০ টাকা; বড় বড় সুপারশপগুলোতে এগুলো প্রসেস করে বিক্রি করে কেজিপ্রতি ৪৯০-৫২০ টাকা।
‘আপনি জেনে খুশি হবেন যে, ছোট আকারে হলেও আমাদের দেশ থেকে বেশ কয়েকটি কোম্পানি হাঁসের রপ্তানিও করছে। তাছাড়া ‘হাঁস শুধু শীতের সময়েই খেতে হবে’ এমন একটি ভুল ধারনা মানুষের মন থেকে আস্তে আস্তে বিদায় নিচ্ছে এবং নিবে। হাঁসের মাংসের সুস্বাদু ও মজাদার খাবার তৈরি ও বিক্রির স্বতন্ত্র রেস্টুরেন্টও হচ্ছে। তারমানে, হাঁসের বাজার আস্তে আস্তে সম্প্রসারিত এবং এটির একটি বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া দেশ যেমন- চায়না, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াতে সারা বছরব্যাপী হাঁস খাওয়ার একটি অভ্যাস আছে। হাঁস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ঋতুভিত্তিক যে একটি মিথ আছে সেটি ভুল ধারনা। কারণ, শুধু হাঁস কেন যে কোন মাংস তা সে গরু, ছাগল, ভেড়া যাই হোক না কেন, সেটি যদি অধিক চর্বি ও মসলাযুক্ত হয়, তবে শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গরম হবে। আমাদের এ ভুল ধারনাগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং আশা করি এক সময় গরু, মুরগি, খাসি, মহিষ কিংবা ভেড়ার মতো হাঁসের বছরব্যাপী হাঁসের মাংস খাওয়ার প্রচলনও এদেশে শুরু হবে’ -যোগ করেন শাহ ফাহাদ হাবীব।
আমরা আপাতত সপ্তাহে ১৫ হাজারের মতো বাচ্চা উৎপাদন করছি এবং খুব শীঘ্রই সেটি ২৫-৩০ হাজারে উন্নীত হবে। ইতিমধ্যে ৩ মাসের প্রি অর্ডার বুকড হয়ে গেছে। ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে আমাদের প্রথম হ্যাচ এবং বাজারজাত শুরু হবে, ইনশাল্লাহ।
বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ: ডা. শফিকুল ইসলাম, হেড অব কাস্টমার সার্ভিস এন্ড টেকনিক্যাল সার্পোট। মোবাইল : ০১৭৫৫৫৪০৯৫২