রংপুর সংবাদদাতা: বাংলাদেশী কৃষকদের মধ্যে বিটি বেগুন ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে এবং শুরু থেকে (২০১৩ সন) এ পর্যন্ত দেশের প্রায় পঁয়ষট্টি হাজারের বেশি কৃষক বিটি বেগুন আবাদ করছে- দাবী করেছে ফিড দ্য ফিউচার ইন্সেক্ট রেজিস্ট্যান্ট এগপ্ল্যান্ট পার্টনারশিপ প্রকল্প। প্রতিষ্ঠানটির দাবী, জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করে এমন চারটি জাত চাষ হচ্ছে । বেগুনের এই জাতগুলো ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার যেমন কমায় তেমনি ভালো ফলন দেয়। উৎপাদন খরচ কম ও ভালো ফলন হওয়ায় এর থেকে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে ।
জানা যায়, গত ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউএসএইড একটি প্রতিনিধি দল জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত বারি বিটি বেগুনের মাঠ পরিদর্শন করেন। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় বিটি বেগুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । প্রতিনিধিদল ফিড দ্য ফিউচার ইন্সেক্ট রেজিস্ট্যান্ট এগপ্ল্যান্ট পার্টনারশিপ প্রকল্পের পার্টনার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) কর্তৃক বিটি বেগুনের বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মাঠ পরিদর্শন করেন ।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র কলেজ অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস এর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ প্রফেসর এবং ফিড দ্য ফিউচার ইন্সেক্ট রেজিস্ট্যান্ট এগপ্ল্যান্ট পার্টনারশিপ প্রকল্পের পরিচালক ম্যারিসেলিস অ্যাসেভেদো বলেন, “বিটি বেগুন কৃষকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে কারণ কম কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় এবং এটি পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখছে । ফলন ভালো হওয়ায় অধিক অ্যায়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে”। তিনি আরো বলেন, “এই জীব প্রযুক্তি বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে ।
বেগুনের নতুন ও স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত জাত উদ্ভাবনের জন্য ফিড দ্য ফিউচার প্রকল্পটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং ফিলিপাইনের বিজ্ঞানীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে ।
ইউএসএইড কর্মকর্তারা রংপুরে বেশ কয়জন বিটি বেগুন চাষীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। দামুদরপুর গ্রামের কৃষক মো. ইবনুল ইসলাম বিএআরআই-এর অন-ফিল্ড রিসার্চ ডিভিশন স্টেশন, আলমনগর থেকে বীজ পেয়ে চলতি মৌসুমে বিটি বেগুন চাষ শুরু করেন। ইবনুল ইসলাম ও তার পরিবার বিটি বেগুন চাষ করে ব্যাপক সুফল পেয়েছেন। এটি তার ক্ষেতে ক্ষতিকারক কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে।
ইবনুল বলেন, “বিটি বেগুন চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি, । বিটি বেগুন একই সাথে যেমন টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব চাষ পদ্ধতি নিশ্চিত করে তেমনি উৎপাদিত বিটি বেগুন স্থানীয় বাজারে ‘’কীটনাশক মুক্ত বেগুন’’ হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, বেগুনের গুণমান এবং স্বাদ ভোক্তারা পছন্দ করে।”
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) থেকে বীজ পেয়ে কৃষক আজহার আলী মন্ডল বিটি বেগুন চাষ শুরু করেছেন। এর আগে তিনি বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রতি মৌসুমে প্রায় ১০০ বার কীটনাশক স্প্রে করেও ফলন কম হওয়ায় অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন । বিটি বেগুন চাষ করায় এখন তার উপার্জন বেড়েছে এবং কীটনাশক প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমে গেছে।
উল্লেখ্য, ইউএসএইড এর ফিড দ্য ফিউচার এর অর্থায়নে ফিড দ্য ফিউচার ইন্সেক্ট রেজিস্ট্যান্ট এগপ্ল্যান্ট পার্টনারশিপ প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈশ্বিক ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগ এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।