বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

পোলট্রি শিল্পের এমন নাজুক অবস্থা বিগত ৩১ বছরে আসেনি -বিপিআইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জনসাধরণের অন্যতম খাদ্যপণ্যের মধ্যে ডিম ও মুরগীর মাংসের খুচরা দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পক্ষান্তরে খামারীরা তাদের উৎপাদন মূল্য না পাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে কোন না কোন পোল্ট্রি খামার। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান ১,৫৮,১৭৯টি খামারের মধ্যে চালু আছে ৯৫,৫২৩টি খামার। ১,৫৮,১৭৯টি খামারের উৎপাদন সক্ষমতা-মুরগীর মাংস ৫২৭৩ মে.টন। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪২১৯ মে.টন যা উৎপাদনে সক্ষমতা থেকে ২৫.৭১% কম। একইভাবে ডিম উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক যেখানে ৬,৬৪,৮২,১৮৩টি সেখানে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৪,৩২,১৩,৪১৮টি ডিম যা উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ ভাগ কম।

করোনার সময় থেকে অদ্যবধি পোল্ট্রি সেক্টর থেকে কর্মহারিয়ে বেকার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ কর্মজীবি মানুষ। প্রতিদিন স্ব-পেশা থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন অনেকেই। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নিবন্ধনের ৩১ বছরের ইতিহাসে পোল্ট্রি সেক্টরে এমন নাজুক অবস্থা কখনো আসেনি।

আজ রবিবার ( ৫ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দগণ এসব কথা বলেন।

পোলট্রি ফার্ম বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ডিম ও মুরগী যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচ তার চেয়ে অনেক বেশী। গতকালকে গাজীপুরে ১টি ডিমের পাইকারী মূল্য ছিল ৯.৪৫ টাকা, পক্ষান্তরে ১টি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১.৭১ টাকা। প্রতি ডিম বিক্রয়ে ক্ষতি হচ্ছে ২.২৬টাকা। এভাবে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বন্ধ হচ্ছে ডিম উৎপাদনকারী খামার। ওদিকে সময়ে সময়ে বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে বাচ্চা উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ১দিনের লাখ লাখ মুরগীর বাচ্চা মেরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদনে ৬৮ থেকে ৭০ ভাগ খরচ হয় খাদ্যে। আর এই খাদ্যের বেশির ভাগ উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির জন্য ৮৪ টাকার ডলার ১১০ টাকা দিয়েও সহজ লভ্য হচ্ছে না। জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহন সহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ।

২০২০ সালের মাঝামাঝি প্রতি কেজি ভূট্টার দাম ছিল ১৭.৩০ টাকা যা বর্তমানে ভূট্টার মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি শুকনা ভূট্টার মূল্য ৩৮ টাকার উপরে। পোল্ট্রি খাদ্যে ভূট্টার ব্যবহার ৫৭/৫৮ ভাগ। একই সাথে পোল্ট্রি খাদ্যে সয়াবিন খৈলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ। উক্ত সয়াবিন খৈল ২০২০ সালে প্রতি কেজি যেখানে ৩৫/৩৬ টাকা ছিল এখন সেই সয়াবিন খৈল প্রতি কেজি ৮৪ টাকার উপরে।

পোল্ট্রি খাদ্যে ব্যবহৃত হয় এমন সবকয়টি খাদ্য উপাদানের মূল্য বৃদ্ধি সহ দুস্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে কোন না কোনটি। বর্তমানে খাদ্য উপাদান সংকট চরমে। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান আমদানির জন্য চাহিদা মত এলসি ওপেন করতে না পারলে একে একে বন্ধ হবে ছোট-বড় আরো পোল্ট্রি খামার সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

This post has already been read 4213 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …