মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: ডিম ও মুরগির গতানুগতিক যে দামে আমরা অভ্যস্ত সে তুলনায় এসবের দাম অবশ্যই বেড়েছে। কারণ, বেশ লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশে ডিম ও মুরগির দাম প্রায় একই ধরনের ছিল। এর মূল কারণ হচ্ছে কাঁচামালের দাম। আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে- ডিম ও মুরগি আসলে কি? ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় এবং সেই বাচ্চা খাবার খেয়ে আস্তে আস্তে বড় হয় এবং একটি সময় সে ডিম পাড়া বা মাংস খাওয়ার উপযোগী হয়। মুরগির এই খাবার তৈরির মূল উৎস ভুট্টা, সয়াবিন, চালের কুড়া ইত্যাদি ছাড়াও ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমাদের দেশে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রমোটোর নিষিদ্ধ সেই কারণে কিছু নন এন্টিবায়োটিক সোর্সও থাকে, খুবই সুষম নিউট্রিশন দেয়া হয়্। ডিম ও মুরগি উৎপাদনের মূল খরচই যেহেতু খাদ্য এবং সেই খাদ্য তৈরির কাঁচামালের দাম যদি বেড়ে যায়, তবে সেগুলোর দাম অটোমেটিক বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এগ্রিনউজ২৪.কম কে এসব কথা বলেন, ফিআব সভাপতি, বিপিআইসিসি’র সহ সভাপতি এবং নারিশ পোলট্রি হ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড -এর পরিচালক শামসুল আরেফীন খালেদ (অঞ্জন)।
অঞ্জন বলেন, এছাড়াও আরো অন্যতম একটি কারণ যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়েছে। লম্বা সময় ধরে লোকসানের কারণে অনেকখামারি ঝরে গেছে এবং শীতের কারণে অনেকেই খামারে মুরগি তুলেননি। উৎপাদন বাড়লে আবার হয়তো ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে এবং আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এসবের দাম সহনীয় একটি পর্যায়ে নিয়ে আসার। সরবরাহ বাড়ার কারণে আশা করি, রোযার মাস থেকেই দাম কিছুটা কমে আসবে।
তিনি বলেন, গত এক বছরের ফিড তৈরির উপকরণের দাম প্রায় দ্বিগুণ বা আরো বেশি হয়ে গেছে। দুই বছর আগে এসবের যে দাম ছিল সেগুলোর সাথে বর্তমান দামের কোন মিলই নেই। যে কারণে ভোক্তারা আগে যেখানে ১৪০-১৫০ টাকা দামে মুরগি খেতে পারতো, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি প্রায় ২৫০ টাকা হয়ে গেছে।
‘মুরগি যেহেতু একটি জীবন্ত প্রাণি, তাই এটিকে চাইলেই তাৎক্ষনিক উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় না। এখন যেহেতু খামারিরা ডিম ও মুরগির দাম পাচ্ছেন এবং তারা সাহস করে যদি আবার ফিরে আসেন তবে উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে দাম মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তবে একটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, অন্যান্য জিনিসের দাম যেহেতু বেড়েছে সেহেতু মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটাতো বাড়বেই। আগের দামে হয়তো ফেরত আসবে না, হয়তো ১৫০ টাকা কেজি দরে মুরগি খাওয়া কঠিন হবে’ – যোগ করেন অঞ্জন।
মি. অঞ্জন আরো বলেন, এ কথা সত্যি-এই মুহূর্তে একজন খামারি ডিম ও মুরগিতে লাভ করতে পারছেন। কিন্তু গত বছর একেবারেই লাভ করতে পারেনি, অনেক টাকা লোকসান দিয়ে পুঁজি হারিয়ে তারা সর্বশ্বান্ত হয়েছে, ফিডমিলাররাও বসে গেছে, বাচ্চার উৎপাদনকারীরাও লোকসান করেছে; সেক্টরের এক-দেড় বছরের যে লোকসান সেটির প্রভাবেই উৎপাদন মূলত কমে গেছে। খামারি, ফিডমিলার, বাচ্চা উৎপাদনকারীগণ যদি কিছুটা হলেও লাভ পায় তবে তারা আবার ফিরে আসবেন এবং উৎপাদন বাড়বে। আসলে প্রত্যেকটা ব্যবসায় টেকসই অবস্থানের জন্য একটি মিনিমাম প্রফিট হলেও দরকার।
আগামী ১৬-১৭ মার্চ ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে অবস্থিত আইসিসিবিতে অনুষ্ঠেয় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো’তে অংশগ্রহণের জন্য খামারি, ভোক্তা সবাইকে তিনি আমন্ত্রণ জানান। শুধু নিজেরাই নয়, পরিবার ও বাচ্চাদের সহ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ পোলট্রি মেলায় নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পোলট্রি সম্পর্কে জানতে পারবেন, বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারনা থেকে পরিত্রাণ পাবেন, খামারিরা বিশ্বের নতুন নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে, শিখতে ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।