রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, ভিয়েতনাম কাজুবাদাম রপ্তানি করে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করে। দেশটি যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে। বাকী ৫০-৬০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করে থাকে। আমাদের দেশেও কাজুবাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে ভিয়েতনামের মতো আয় করা সম্ভব। সেজন্য, পাহাড়ের বিশাল এলাকায় এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেলক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার সাপছড়ি ও দ্বিচানপাড়ায় ভার্মি কম্পোস্ট, সূর্যমুখীর খেত, মাল্টা, আনারস কাজুবাদাম ও কফি বাগান পরিদর্শন এবং চাষিদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, গতানুগতিক কৃষিকাজ করে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে না। কৃষি আধুনিক হলেই মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। সেজন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নানান উদ্যোগের ফলে কৃষি এখন যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত বাড়ছে ও রপ্তানিও বাড়ছে।
তিনি বলেন, কৃষিকে আরো লাভজনক করতে হলে ধান, গম, শাকসবজিসহ প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, আনারস, আমসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত অর্থকরী ফসলের চাষ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, সিলেট ও মৌলভীবাজার যেমন চায়ের জন্য নামকরা, তেমনি কাজুবাদাম ও কফির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা পরিচিত হয়ে উঠবে। কফি-কাজু বললেই মানুষ পাহাড়কে চিনবে। পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্ভাবনা অনেক। এসব ফসল একবার লাগালে অনেকদিন টিকবে, বছর বছর ফসল লাগাতে হবে না। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া যাবে।
মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য অঞ্চল দেশের জন্য বোঝা নয়, দেশের জন্য সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকায় পরিণত হবে।
পরিদর্শনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, দীপংকর তালুকদার এমপি, বাসন্তী চাকমা এমপি, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো: বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একইদিন দুপুরে কৃষিমন্ত্রী রাঙ্গামাটি শহরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে কৃষি আবহাওয়ার জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ও কৃষি আবহাওয়া রেডিওর উদ্বোধন করেন।
কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় দেশের সকল জেলায় ও সদর দপ্তরে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড এবং ১২টি কৃষি অঞ্চলে কৃষি আবহাওয়া রেডিও স্থাপনের অংশ হিসেবে এটি স্থাপন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। কাজেই নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে সময়মত পৌঁছে দেওয়া কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকল্পের পরিচালক শাহ কামাল খান জানান, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড এবং কৃষি আবহাওয়া রেডিও-এর মাধ্যমে জরুরী কৃষি ও কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক বার্তা কৃষকদের নিকট সময়মত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এটি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।