নিজস্ব প্রতিবেদক: ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরি ঘোষণা ও প্রাণিসম্পদ বিপণন উইং চালুসহ ভেটেরিনারিয়ানদের পেশাগত ও জাতীয় উন্নয়নে যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে সবসময়ের মতো সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করবো- বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, করোনাকালীন দেশের প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার জন্য ও খামারীদের কথা বিবেচনা করে এবং জনগণের নিকট প্রাণিজ আমিষ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভেটেরিনারিয়ানগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছিল। এসময় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ভেটেরিনারি সেবা প্রকৃত অর্থেই জরুরি সেবার অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। এ সময় আপনারা ডিম, দুধ ও মাংস বিপণনের কাজ করেছেন। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তিনি এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আপনাদের এ কর্মকাণ্ড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি বিপণন উইং সৃষ্টির দাবিকে জোরালো করে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভাটি সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার। বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “Promoting Diversity, Equity and Inclusiveness in the Veterinary Profession.” আলোচনা সভার পূর্বে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এর প্রাঙ্গন থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু করে খামারবাড়ি মোড় প্রদক্ষিণ করে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ পর্যন্ত এসে শেষ হয়। এছাড়াও ভেটেরিনারি পেশায় অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চাহিদার তুলনায় দুধ উৎপাদনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আশা করা যাচ্ছে ডেইরি সেক্টরে সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ ও ডেইরি উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ দুধ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোরবানীর ঈদের সময় দেশে কোরবানীকৃত পশুর ১০০% চাহিদা দেশে উৎপাদিত প্রাণী দ্বারা পূরণ হয়ে থাকে, এমনকি কিছু পশু উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এ বিষয়টি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এখন জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এবং সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনের জন্য এ দেশের জনগণের নিকট মানসম্পন্ন ও নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ভেটেরিনারি সার্ভিসকে আরও শক্তিশালি করার জন্য ২০২০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের ফলে অধিক সংখ্যক ভেটেরিনারিয়ানদের ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ভেটেরিনারি সার্ভিস জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক প্রদান করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কৃষিখাতে সর্ববৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এখন জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এবং সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনের জন্য এ দেশের জনগণের নিকট মানসম্পন্ন ও নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, ‘‘২০০৯ সালে জনগণের বিপুল রায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করলে ভেটেরিনারি শিক্ষা ও ভেটেরিনারি পেশার উন্নয়নে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গবেষণা, পশুপাখির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভেটেরিনারিয়ানদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতসমূহ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে বিগত এক দশকে প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. নাহিদ রশিদ, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূইয়া, সভাপতি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিম্যাল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি, কৃষিবিদ মো. খায়রুল আলম প্রিন্স, মহাসচিব, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, কৃষিবিদ ডা. মো. মনজুর কাদির, সভাপতি, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল, সম্মানিত অতিথি কৃষিবিদ ড. এস এম নজরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, মহাসচিব, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দি ভেট এক্সিকিউটিভ সভাপতি ডা. বিশ্বজিৎ কুমার রায় এবং সাধারণ ডা. সাইফুল বাশার ছাড়াও সাধারণ ভেটেনারিয়াগণ।
এছাড়া আলোচনা সভায় উপস্থিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে প্রাণিসম্পদে সাধারণ ভেটেরিনারিয়ানবৃন্দের বিভিন্ন অবদান উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন এর মহাসচিব কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরি ঘোষণা ও প্রাণিসম্পদ বিপণন উইং কে চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস ২০২৩ যৌথভাবে উদযাপিত হয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, দি ভেট এক্সিকিউটিভ, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট’স ফেডারেশন এর উদ্যোগে।