রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

গরুর ভালো একটি জাত দেশে খুব প্রয়োজন -ড. আনসারী

সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ড. এফএইচ আনসারী, প্রেসিডেন্ট, এসিআই এগ্রিবিজনেস।

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে আজকে গরুর মাংসের অনেক দাম। কারণ, আমাদের গরুর এফসিআর অনেক বেশি। এফসিআর বেশি হওয়ার মূল কারণ ভালো জাতের গরুর অভাব। গরুর ভালো একটি জাত দেশে খুব প্রয়োজন। যার এফসিআর হবে ৪ বা ৫ কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি মাংস। যার দৈহিক ওজন হবে ১ টন কিংবা সোয়া টন, মাংস সুস্বাদু হবে, স্থানীয়ভাবে লালন পালন করলে রোগ বালাই কম হবে। নতুন জাত নিয়ে খামারিদের সংশয় থাকতে পারে, কিন্তু নতুন জাতই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। আমাদের দেশের খামারিরা প্রাণিসম্পদ খাতে উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এখন আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার ও পর্যাপ্ত গবেষণায় ফোকাস করতে হবে।

শনিবার (২৭ মে) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশনের ১১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী এসব কথা বলেন। সম্মেলনে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি কে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে  একটি উন্নত জাতের গরু উপহারের মাধ্যমে দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে উদাহরণ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

“নতুন জাতের গরুর নাম হতে পারে বাংলার গর্ব কিংবা সোনার বাংলা। যার জন্য বাংলার মানুষ যুগে যুগে আপনাকে মনে রাখবে, খামারিরা লালন পালন করে উপকৃত হবে, মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, এফসিআর কম হবে, আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম খরচে মাংস উৎপাদন করে দেশের মানুষকে খাওয়াতে পারব এবং দেশের বাহিরে মাংস রপ্তানি করা সম্ভব হবে” -যোগ করেন ড. আনসারী।

তিনি বলেন, দেশি গরুতে ১১ কেজি খাবার খাওয়ালে ১ কেজি মাংস পাওয়া যায়, শংকর জাতের গরুতে ৭ কেজি খাদ্যে ১ কেজি মাংস পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে উন্নত জাতের ব্রাহমা গরু নিয়ে পূর্বে কিছু কাজ হয়েছিল এবং এ সমস্ত গরু থেকে প্রতি ৫ কেজি খাবারে ১

কেজি মাংস পাওয়া যায়। আমাদের গ্রামীণ পরিবেশে এদের লালন পালন করা যায় ও আমাদের গৃহস্থালি মেয়েদের সাথেও এরা বন্ধুসুলভ আচরণ করে। সেই গরুগুলো আরো নিয়ন্ত্রিতভাবে খামারিদের পালন ও মাংস উৎপাদনের অনুমতি দিলে খামারি উপকৃত হবে এবং দেশে মাংসের দাম কমে আসতে পারে।

তিনি আরো বলেন, উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপকতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণ ও গবেষণা সক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা যে মুরগী ও গরুর মাংস উৎপাদন করছি সেখানে ভ্যালু এড করা খুব জরুরি। ভ্যালু এড এর মাধ্যমে পণ্যের সেলফ লাইফ বাড়বে ও আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারব। এই সেক্টর থেকে যে বাই প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে তা অর্গানিক ফার্টিলাইজার কিংবা কনসেনট্রেটেড প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। প্রাইভেট সেক্টরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে সরকারকে বিনীত অনুরোধ জানান, এ সময় তিনি।

ড. আনসারী বলেন, বর্তমান মন্ত্রীর ডাইনামিক নেতৃত্বে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় এর অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ ও খামারিরা নতুন করে আশার আলো দেখছি। তিনি পরিষ্কার ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন। খামারিদের উন্নয়নের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। খামারির মাছ, মাংস ও ডিম রাস্তায় বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন; এমনকি নিজেও কোন কোন জায়গায় অংশ নিয়েছেন, যা ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালককে অত্যন্ত ডাইনামিক প্রাণি বিজ্ঞানী উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনার সহায়তায় এ কাজটি করা সহজ হবে। ইতোমধ্যে আপনার গৃহীত পদক্ষেপে আশান্বিত হয়ে প্রাণিসম্পদ উদ্যোক্তারা আবার দৃপ্ত পদক্ষেপে ঘুরে দাড়াচ্ছে এবং বাংলাদেশকে প্রাণিজ আমিষে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রচেষ্টা এর মাধ্যমে অচিরেই পূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা প্রাইভেট কোম্পানি আপনাকে সর্বতভাবে সহায়তা করবো এবং আপনার পাশে থেকে কাজ করব।

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে এনিমেল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের গবেষণা, গবেষণালদ্ধ ফলাফল প্রয়োগ এবং খামারিদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম, গবেষণা ও গবেষণালদ্ধ ফলাফল যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এই সেক্টর আরো উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করবে এবং দেশে প্রাণিজ আমিষ প্রাপ্তির নিশ্চায়তা নিশ্চিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে দেশের এনিমেল হাজবেন্ড গ্রাজুয়েটগণ যে নিরলস ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ৷ এসিআই এগ্রিবিজনেস সর্বদায় আপনাদের পাশে থাকবে। আমরা এসিআই ক্যাটেল, পোল্ট্রি ও  অ্যাকোয়া ভ্যালু চেইনের প্রায় সর্বত্রই কাজ করে থাকি এবং আমরা আমাদের কাজের পরিধি যেমন বৃদ্ধি করছি সাথে সাথে উন্নত সকল টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের প্রাণিসম্পদ খাত এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

This post has already been read 2370 times!

Check Also

চট্টগ্রামে আর ভি মিন সন্ধানী জাহাজ পরিদর্শন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সোমবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত …