নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকারর পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তাদের মধ্যে পুষ্টির অভাব রয়েছে। শহরের অনেকেই খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একই সময়ে, অতিরিক্ত ওজন ও স্থুলতা এবং পুষ্টিহীনতা ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতিগুলো ঢাকার জন্য তিনগুণ বোঝায় পরিণত হয়েছে।
রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১’ এর উদ্বোধনী দিনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মো. আতিকুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন। সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম। নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ তৈরিতে সহায়তা করেছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিয়্যেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ (WUR)।
জানা যায়, দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) নিয়ে গঠিত ঢাকা বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতোই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দুই কোটিরও বেশী মানুষের নিবাস ঢাকায় খাদ্যের চাহিদা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সামর্থ্যের মধ্যে এখন অনেক ব্যবধান রয়েছে। এই প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে দেশের ১০০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ তৈরিতে একসাথে এগিয়ে এসেছে। এই এজন্ডাটি শহরে বসবাসকারী প্রত্যেকে – যুবক এবং বৃদ্ধ, ধনী এবং দরিদ্র – সাশ্রয়ী মূল্যের, মানসম্পন্ন পুষ্টিকর খাবার কীভাবে কিনতে পারে যা টেকসইভাবে উৎপাদিত হয় তার জন্য একটি পথ নির্ধারণ করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন: “ঢাকায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করে। তাদের স্বাস্থ্য এবং পৃথিবীর স্বার্থেই খাদ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার জন্য, বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের জন্য এবং আন্তর্জাতিকভাবেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সুযোগ রয়েছে, একটি নতুন পদ্ধতির সাথে যা বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবং ভবিষ্যতের দিকে নজর দেয়।”
ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার জাভিয়ে বোয়ান বলেন: “আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী নথিটি তৈরি করতে বিভিন্ন সেক্টরের অবদানকারীকে একত্রিত করতে পেরে গর্বিত। এটি ঢাকার খাদ্যের ভবিষ্যত গঠনের ক্ষমতা রাখে – লাখ লাখ মানুষ যা খাচ্ছে, সেই খাবারকে সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত করে। আমরা বিশ্বাস করি যে এটি ইতিবাচক, অগ্রসর চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতি প্রণয়নে অনুপ্রেরণা দেবে।“
ঢাকা ফুড এজেন্ডা ২০৪১ একটি খাদ্য ব্যবস্থা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এজেন্ডাটি নীতিনির্ধারণ এবং নগর পরিকল্পনাকে সহায়তা করবে, যা জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলনের জাতীয় লক্ষ্যের সাথে এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নীতি এবং পরিকল্পনার পরিপূরক – বিশেষ করে বাংলাদেশ ২০২১-২০৪১ এর পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত। সরকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং একাডেমিয়া সহ ১০০ টিরও বেশি সংস্থা ঢাকা ফুড এজেন্ডা প্রস্তুতে জড়িত ছিল।
ঢাকা ফুড এজেন্ডার অবলম্বনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্প ঢাকার নগর পরিকল্পনায় খাদ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিটি কর্পোরেশনে সিটি ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ‘ফুড চার্টার’ প্রণয়ন করেছে। প্রকল্পটি কাঁচাবাজারের উন্নয়ন করেছে, কৃষকদের বাজার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নগর কৃষির প্রচার করেছে।