কিশোরগঞ্জ: খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০৩০ সালকে সামনে রেখে গ্রহণ করা হয়েছে জাতীয় পরিকল্পনা। কিন্তু দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের মাঝে পুষ্টি ও প্রোটিন বিষয়ক সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে; চিকিৎসক, ওপিনিয়ন লিডার এবং মডেল তারকাদের কাজে লাগাতে হবে। আজ (শনিবার, ১৭ জুন) কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজে “রাইট টু প্রোটিন” বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এ মতামত দেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ এবং ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল হালিম বলেন, টেকসই উন্নয়নের পথে পুষ্টি ঘাটতি একটি বড় অন্তরায়। এর নেতিবাচক প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। পুষ্টি সূচকে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করলেও ২০৩১ কিংবা ২০৪১ সালের জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের প্রচুর কাজ করতে হবে।
মেডিসিন বিভাগের প্রধান, প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান বলেন- দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস অত্যন্ত দরকারি খাদ্য অথচ এখনও দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মাঝে এসব খাদ্য সম্পর্কে নানাবিধ ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আমাদের দেশে দুধ খাওয়ার পরিমাণ এখনও অনেক কম। ব্রয়লার মুরগির মাংস অনেকেই খান না অথচ বিশ্বজুড়েই এ মাংস সমাদৃত। ডিম খেলে হার্টের সমস্যা হয়, প্রেসার হয়, শরীর মোটা হয়ে যায়, অপারেশনের রোগীকে ডিম দেয়া যাবেনা, বয়স্কদের ডিম-মাংস দেয়া যাবেনা- এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারণা।
বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, পুষ্টি ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০৭২ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে। প্রি-স্কুল বাচ্চাদের এক তৃতীয়াংশ খর্বাকৃতির, এক পঞ্চমাংশের বেশি কম ওজনের এবং দশভাগের এক ভাগ ক্ষীণকায়। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। বিবাহিত নারীদের এক তৃতীয়াংশের ওজন প্রত্যাশিত মাত্রার নিচে। পুষ্টি ও প্রোটিন বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়াতে তিনি স্কুলের পাঠ্যক্রমে এ বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বিগত কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বেশ লম্বা হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ম্যাথ অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। এই ইতিবাচক অগ্রগতি এবং ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের কনজাম্পশন বাড়ার যে প্রবণতা- তা প্রায় একই গতিতে এগিয়েছে।
জনাব খালেদ বলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশ মোনাকোর মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। চীনের একজন মানুষ ৭৫ বছর বয়সেও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। নেদারল্যান্ডস কিংবা চীনের মানুষেরা এখনকার মত এতটা লম্বা ছিল না। অলিম্পিকের মেডেল তালিকায় আমেরিকা এবং ইউরোপই শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বহুকাল। এ সফলতার পেছনে মূল কারণটি হচ্ছে- তাঁরা পর্যাপ্ত প্রোটিন ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন।
ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশ টীম লীড খবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। পুষ্টি সূচকে উন্নতি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর প্রতিষ্ঠান বিশ^জুড়ে কাজ করে যাচ্ছে।
সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায়, ভাইস-প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. নিরঞ্জন চন্দ্র বসাক, প্রফেসর খন্দকার শাহনেওয়াজ এবং ডা. কিউ এম এনায়েত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ, যোগাযোগ ও মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার আবু বকর প্রমুখ। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিয়ান নাজনিন ও রামনিক কর। সেমিনারে মোট প্রায় ২৫০ জন ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্ন ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।