নিজস্ব প্রতিবেদক: পাট গবেষণার বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মানের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। পাটখড়িকে আমাদের উদ্যেক্তারা গোটা বিশ্বব্যাপি বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পাটখড়ি দিয়ে যে চারকল তৈরি হচ্ছে তা বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০০-১৫০ কোটি টাকা উপার্জন করছে। আমি আশা করছি, এই সংখ্যা খুব দ্রুতই ৪০০-৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)-এ আজ (সোমবার) “পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প (জেনোম) এবং বিজেআরআই এর গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার এসব কথা বলেন। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এ অবস্থিত বিজেআরআই এর সম্মেলন কক্ষে উক্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বিজেআরআই এর মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবদুল আউয়াল এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এনডিসি।
আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাসুদ করিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব রেহানা ইয়াছমিন (গবেষণা অনুবিভাগ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো: তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কৃষি তথ্য সার্ভিস এর পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায়, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফখরে আলম ইবনে তাবিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক (তৈলবীজ) ড. মো. তারিকুল ইসলাম।
জেনোম প্রকল্প এর গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে অবহিত এবং প্রকল্পটির ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করান জেনোম প্রকল্প এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কৃষিবিদ ড. কাজী মো. মোছাদ্দেক হোসেন। বিজেআরআই এর গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিজেআরআই এর প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক ড. এস. এম. মাহবুব আলী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব বলেন, আমরা ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাটকে চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আমরা পাটকে যেন বহুমুখীভাবে ব্যবহার করতে পারি সেজন্য উদ্যোক্তা এবং কৃষকদের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, “পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষনা করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুভুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ হতে প্রথমবারের মতো কৃষক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।”
উদ্যোগক্তা এবং কৃষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আজকে আমি সবচেয়ে খুশি হয়েছি করিমগঞ্জের কেনাফ চাষীরা পাট চাষে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পাট একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। পৃথিবীতে সহজে প্রাকৃতিক ফাইবার পাওয়া যায়না। সেখানে আমাদের ছোট্ট একটি দেশে পাটের মত প্রাকৃতিক ফাইবার এতো সহজলভ্য। করোনার সময় আমাদের কৃষকরা আমাদের মাঠকে আকড়ে ধরেছিল, আমাদের ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়নি দেখেই আমাদের দেশ খাদ্য অভাবে পড়েনি, কোন রকম হাহাকার হয়নি।”
পাট বিজ্ঞানী ড. মো. মাকসুদুল আলমের প্রশংসা করে সচিব বলেন মাকসুদুল আলম স্যার একঝাঁক পাট বিজ্ঞানী আমাদের দিয়ে গেছেন, যারা নিরলসভাবে পাটকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিজ্ঞানীদের পাটের বৈচিত্র্যতা নিয়ে কাজ করার আহবান জানান। বৈচিত্র্যতার কোন সীমা নেই। তাই পাটের বৈচিত্র্যতা নিয়ে যত কাজ করা যাবে, পাট ততই এগিয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএডিসি’র চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এনডিসি বলেন, পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের উন্নয়নের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে সম্মানিত হচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক পুরস্কৃত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, “পাটের বিভিন্ন বৈচিত্র্যতা এবং সম্ভাবনা রয়েছে। পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বীজ আমদানী করতে যে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় তা কমাতে এবং দেশী জাতকে প্রচার করতে বিএডিসি উদ্বুদ্ধ।”
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবদুল আউয়াল বলেন, বিজেআরআই এর তিনটি উইং রয়েছে, একটি কৃষি-যা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবন করে এবং কৃষকের কাছে পৌছে দেন। দ্বিতীয়টি কারিগরি উইং-যা পাটকে কারিগরিগতভাবে বহুমুখী ব্যবহারের কাজ করে। আর একটি উইং হলো জুট ডাইভারসিফিকেশন-যা পাটকে বিভিন্ন পণ্যে রুপান্তরিত করে।
বিগত এইবছরে বিজেআরআই দুইটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছে। একটি জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৯, অপরটি বিজেআরআই কেনাফ-৫।
বাংলাদেশে এক মিনিটে এক লাখ পলিথিন ব্যবহৃত হয়। এই পলিথিন মাটির নিচে ৪০০ বছরেও পচেনা। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের জুট ডাইভারসিফিকেশন উইং হতে উৎপাদিত সুতা (৫০% তুলা এবং ৫০% পাটের আশঁ দিয়ে তৈরি) ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন।
আরো উপস্থিত ছিলেন জুট টেক্সটাইল বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা এবং কৃষি বিভাগের পরিচালক কৃষিবিদ ড. নার্গীস আক্তারসহ সকল বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ।