মো. আমিনুল ইসলাম (রাজশাহী) : রাজশাহীর পুঠিয়ার আম বাগানের মধ্যে পতিত জমি ও গাছতলায় বস্তায় আদা চাষ করছেন কৃষক আশিকুজ্জামান ও মেসবাহউদ্দিন নামের দুই বন্ধু। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এই ধরনের নতুন চাষাবাদ কৌশল অবলম্বন করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় আম বাগানের ভেতর ২০ শতাংশ জমিতে ২ হাজার ৬শ টি বস্তায় দেশী আদা চাষ করেছেন তারা। এই প্রযুক্তিতে বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণ করা হলে, দেশে মসলা ফসলের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।
আদা চাষী মো. আশিকুজ্জামান বলেন, সিমেন্ট বা অন্য বস্তায় আদা চাষের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলো একত্রে করে আদা রোপনের ১৫-২০ দিন পূর্বে একত্রে পালা করে পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। প্রতি বস্তায় প্রথমে মাটি ১০-১২ কেজি, গোবর ৫ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট ২ কেজি, টিএসপি ২০ গ্রাম, এমওপি ৭.৫ গ্রাম, ছাই ১ কেজি, কারটাপ ১০ গ্রাম, দস্তা বা জিংক ৫ গ্রাম এবং বোরন ৫ গ্রাম মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণ তৈরীর সময় মাটি, গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট, ছাই, টিএসপি, কারটাপ, জিংক, বোরন সব একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক এমওপি মিশ্রণ তৈরীর সময় দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক ডিএপি আদা রোপনের ৫০ দিন পর এবং বাকী অর্ধেক ইউরিয়া এমওপি সমানভাবে দুই কিস্তিতে রোপনের যথাক্রমে ৮০ দিন ও ১১০ দিন পর বস্তায় প্রয়োগ করতে হবে। অর্ধেক ডিএপি সার আদা রোপণের ৬৫ দিন পর বাকী অর্ধেক ডিএপি সার আদা রোপনের ১৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
এপ্রিল-মে (চৈত্র বৈশাখ) মাসে আদা লাগাতে হবে। তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময় ।
বস্তায় মিশ্রন ভরাট করা: বস্তায় আদা লাগানোর পূর্বে প্রতি বস্তায় পূর্বে তৈরীকৃত মিশ্রন এমনভাবে ভরাতে হবে যাতে বস্তার উপরের দিকে ১-২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে। প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ গ্রামের একটি বীজ মাটির ভিতরে ৪-৫ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। বীজ লাগানোর পর মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
স্থানীয় কৃষক মো: তারেক আলী, ইমরান হোসেন, মশিউর রহমান ও মিজানুর রহমান বলেন, আম বাগানে আদা চাষ এভাবে আমরা কখনো দেখিনি। তবে এভাবে আদা চাষ হচ্ছে এটা আমরাও করবো। আমের বাগানের ভিতরে আদা চাষ দেখতে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার বলেন, আমাদের উপজেলায় এই প্রথম আম বাগানে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছে দুই যুবক। আদার গাছও খুব সুন্দর হয়েছে। আমরা সবসময় পর্যবেক্ষণ করছি আশা করি ভালো ফলন হবে। তাই আমরা এখন থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সামনে যাতে প্রায় ৩০ হেক্টর আম বাগানে আদা চাষ করতে পারি যে জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। এই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম গাছের মাঝে আদা চাষ করা সম্ভব। এই প্রযুক্তিতে আদা চাষে কৃষক/তরুন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতি ইঞ্চি জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের আহবানে শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধি করে পতিত জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হলে উপকৃত হবে জনগণ, উপকৃত হবে দেশ।