ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : উপকুলীয় জেলা সমুহের মধ্যে খুলনা জেলা মৎস্য সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে যেমন রয়েছে স্বাদু পানি, তেমনি রয়েছে আধা লবানাক্ত ও লবনাক্ত পানি। উপকুলীয় জেলা সমুহের মধ্যে খুলনা জেলা হতে প্রতি বছর উল্লেখ্যযোগ্য হারে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। । খুলনা জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট উৎপাদিত মাছের পরিমাণ এক লাখ ২১ হাজার ৭৫০ মেট্রিকটন যা জেলার চাহিদার চেয়ে ৬৪ হাজার ৫৪৫ মেট্রিকটন বেশি। এ সময়ে জেলায় ২৫ হাজার ৩৭৫ মেট্রিকটন চিংড়ি মাছ উৎপাদন হয়েছে। খুলনা অঞ্চল থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৩১৬ মেট্রিকটন মৎস্যপণ্য রপ্তানি করে মোট দুই হাজার ৮২৩ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্ব বাজারে বর্তমানে ৭২% ভেনামী চিংড়ির দখলে। বাকী ২৮% নিয়ে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষে সম্প্রতি খুলনা অঞ্চলের ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামী চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষে অনুমতি দেওয়া হয়েছে । প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, খুলনার বটিয়াঘাটার ফাহিম সি ফুডস, পাইকগাছার গ্রোটেক অ্যাকুয়াকালচার লিমিটেড, কয়রার আয়ান শ্রিম্প কালচার, ডুমুরিয়ার ইএফজি একোয়া ফার্মিং, বটিয়াঘাটার জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার-১। ভেনামী চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষে অনুমতি দেওয়ার ফলে চিংড়ির উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে । ভেনামী চিংড়ি হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ১০ মেট্রিকটন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, খুলনা জেলায় ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে চিংড়ির উৎপাদন ছিল ১৮,২৫৫ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫,৩৭৫ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে এবং বিগত ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ফিন ফিশের উৎপাদন ছিল ৬৬,২৬৫ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১,২১,৭৫০ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে, যা মৎস্য সেক্টরের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জেলায় ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ক্যাট ফিশের (গুলসা,শিং,পাবদা,দেশী টেংরা,নোনা টেংরা ) উৎপাদন ছিল ২,৭৫০ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১২,৮২৫ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে এবং বিগত ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে কাঁকড়ার উৎপাদন ছিল ৪২৫০ মেট্রিক টন যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮৬০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন প্রযোগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের উৎপাদন আশানুরুপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলায় বিগত ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে সুন্দরবন এলকায় মাছের উৎপাদন (পশ্চিম বিভাগ) উৎপাদন ছিল ৫৭৭ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১২৮৫ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে এবং ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার রমৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকার কারনে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে ( খুলনা থেকে ) আহরিত মাছের পরিমান ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে মাছের উৎপাদন ছিল ৬৮৯ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থবছওে বৃদ্ধি পেয়ে ১১৩৩ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, বিগত দেড় দশকে খুলনা জেলায় মাছের উৎপাদন মৎস্য ও শুকটীর উৎপাদনের পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য চাষি/চিংড়ি চাষি ও প্রান্তিক মৎস্যজবিদের জীবন মানের মানোন্নয়নসহ আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ইলিশ মাছের উৎপাদন ছিল ১১৫ মেট্রিকটন যা ২০২২-২৩ অর্থ বছওে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫৫৫ মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে, ফলে উপকুলীয় মৎস্যসম্পদের পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদনেও খুলনা জেলা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো জানান,সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় করনা কালিন সময়ে মৎস্য উৎপাদন সহনশীল মাত্রা বজায় রাখার জন্য এবং কোভিড-১৯ এর প্রভাবে খুলনা জেলায় ৯,৮৬৩ জন ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষী ও /চিংড়ি চাষিদের ১৪,৭৯,৪৫,০০০ টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে এবং ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে খুলনা জেলায় ৯৪ টি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে । ইাতমধ্যে প্রকল্প থেকে ৩২ টি ক্লাস্টারে মোট ১০৬০.৮১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকার সময়ে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে মৎস্যজীবি/জেলেদের কোন প্রকার ভিজিএফ (চাল) কিংবা কোনো প্রকার খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হতো না,কিন্তু বর্তমানে যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকার সময়ে প্রতি জেলে পরিবারকে ৮৬ কেজি হারে ২৩,০৮০ জনকে মোট ১৯৮৪.৮৮ মে.টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে। ফলে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালিন সময়ে জেলে পরিবার স্বাভাবিক জীবন-যাপন অতিবাহিত করতে সক্ষম হয়েছে। যা বর্তমান সরকারের একটি প্রশংসনীয় ও মহৎ পদক্ষেপ হিসেবে খুলনা জেলায় সর্বত্র সমাদৃত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।