দীন মোহাম্মদ দীনু: নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় স্বপ্ননীড় অ্যাগ্রো বিডি ফার্মে দেশের কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে একটি টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাপ্রোপ্রিয়েট স্কিল মেকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি) প্রজেক্টের সহযোগিতায় এবং দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড এর অর্থায়নে স্থাপিত এ পার্কটি যৌথভাবে উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কে কালিতা ও দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল।
টেকনোলজি পার্কটিতে ধানের বীজতলা তৈরি ও রোপণ থেকে শুরু করে ফসল বস্তাবন্দি পর্যন্ত প্রায় সকল ধরনের আধুনিক মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, একটি রাইস ট্রান্সপ্লাটার, বিএইউ এসটিআর ড্রায়ার, একটি ট্রাক্টর, একটি সিডার, একটি চপার মেশিন, একটি সিড ট্রে প্রিপারেশন মেশিনসহ অন্যান্য মেশিন রয়েছে। এ পার্ক থেকে কৃষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেবা দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিতা কেটে টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করা হয় এবং পরবর্তীতে মেশিনগুলো পরিদর্শন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। পার্কের উদ্যোক্তা নিলয় খান জানান টেকনোলজি পার্কের মেশিনগুলো পূর্বধলা উপজেলার অধিকাংশ ধান চাষে যান্ত্রিক সেবা দিচ্ছে। কৃষিতে এসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে সময়, শ্রম ও ফসল ক্ষতি কম হয় পাশাপাশি কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে। পার্কের মেশিন ব্যবহারে একটি মৌসুমে প্রায় ১৫০ একর জমির ধান চাষ সম্ভব যা প্রথাগত পদ্ধতি থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়।
আসমি প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কে কালিতা, বাকৃবি কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা, দি মেটাল প্রায়ভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল, সেনেগালের ইন্সটিটিউট সেনেগালাইস দ্য রিসারসেস এগ্রিকোলস এর পরিচালক ড. অ্যালিয়ু ফায়ে, পূর্বধলা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর কবির ,অধ্যাপক ড. রোস্তম আলী , মেটাল এগ্রিমেশিনারি বিসনেস এর বিপনন প্রধান, টি.এম. আছাদুর রহমান প্রমুখ।
অধ্যাপক মঞ্জুরুল আলম বলেন, মানুষ স্বপ্ন দেখে আর চেষ্টা করে সেই স্বপ্ন পূরণের। আমার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ। কৃষি শ্রমিক দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে সুবিধা কম হওয়ায় অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকছে তারা। যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষিতে পূর্বের তুলনায় অনেক সুবিধা বাড়বে এতে মানুষের মাঝে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। যান্ত্রিক কৃষির ফলে ফলন বৃদ্ধি ও সময় সাশ্রয়ী কৃষিতে রূপান্তর হচ্ছে।
মেটাল প্রায়ভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন বাংলাদেশের কৃষিকাজের সঙ্গে যাঁদের একটু হলেও যোগাযোগ আছে, তারা ট্যাফে ট্রাক্টরের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। ১৯৯৩ সালে কৃষির যান্ত্রিকীকরণও শুরু হয়েছিল এই ট্যাফে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। এখন জমি চাষে যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়। যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে ফসল কাটা ও রোপণেও। এই ট্যাফে ট্রাক্টর দেশে এনেছিল দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড।
১৯৮৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা মেটাল এখন গ্রুপ প্রতিষ্ঠান। কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণে জড়িত গ্রুপটির ১৩ প্রতিষ্ঠান। শুরুতে ট্রাক্টর বিক্রি করলেও এখন কৃষিযন্ত্র তৈরি ও আমদানি, বীজ উৎপাদন, অটোমোবাইল, মোবাইলের টাওয়ার নির্মাণও পরিচালনাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত মেটাল।
আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রতিটি কাজ হৃদয় দিয়ে মন থেকে করি। বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে মেটাল সব সময় প্রস্তুত। যান্ত্রিকীকরণের যাত্রা নিয়ে উদ্যোক্তা নিলয় খান বলেন, প্রথমে একটি মিনি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে শুরু হয় আমার যাত্রা। মেশিন বিষয়ে তখন কিছুই বুঝতাম না কীভাবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মেটাল কোম্পানির সহযোগিতায় মেশিন বিষয়ক কর্মশালা ও অনেক তথ্য পাই। কৃষি কাজে এসব মেশিনের ব্যবহার সময় ও শ্রম উভয়ই কম লাগছে পাশাপাশি অধিক অর্থ আয় হচ্ছে।