
ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : পানিকচুতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণাগুণ, আমাদের দেশে অপ্রচলিত সবজিগুলোর একটি। একসময় এ সবজিটি বসতবাড়ির অনাবাদি পতিত জমিতে অযত্নে অবহেলায় চাষ হতো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার বিবেচনায় বৈচিত্র্যময় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ফসলটি এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে পানিকচু ফসলটি এখন অনেক বেশি সম্ভবনাময় হয়ে উঠছে। চলতি মৌসুমে খুলনা জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপকভাবে পানি কচুর চাষ হয়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়ার নিউটন মন্ডল কচুর চাষ করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। শুধু কচুর চাষ বিক্রি করেই থেমে থাকেননি তিনি। গড়ে তুলেছেন কচুর নার্সারি। জেলার উৎপাদিত পানিকচু ও চারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হওয়ার পাশাপাশী ভারত ও কোরিয়াতে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে অপ্রচলিত সবজি রপ্তানিতে সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনা
পানিকচু চাষ, চারা উৎপাদন ও বিক্রির মডেলে পরিণত হয়েছেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা মাদারডাঙা গ্রামের নিউটন মন্ডল। পেশায় খুলনা দৌলতপুরের পপুলার জুটমিলের যাচাই শ্রমিক । তিনি শ্রমিকের কাজ ছেড়ে ২০০৮ সালে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে পানিকচু চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজ করে আজ সফল পানিকচু চাষিতে পরিনত হয়েছেন। নিউটন মন্ডলের ক্ষেতে উৎপাদিত পানিকচুর ডগা শুকিয়ে তা রপ্তানি হচ্ছে কোরিয়াতে এছাড়া তার নার্সারীতে উৎপাদিত পানিকচুর চারা দেশের বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি হওয়া ছাড়াও ভারতে রপ্তানি করছেন।
নিউটন মন্ডল বলেন, আমি অনেক দিন থেকেই কচুর চাষ করছি। শুরুতেই অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। অনেকেই আমাকে কচু চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসল চাষের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি আশা না ছেড়ে কচু চাষে লেগেই ছিলাম। পরে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা লাভ করলে আমার চাষ করা কচু থেকে লাভ আসতে শুরু করে। পরে আমি নিজেই একটি কচুর নার্সারি করি। সেখান থেকেও বেশ ভালো আয় হচ্ছে। এই মৌসুমে কচুর চারা বিক্রি ও রপ্তানি করে ৭০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, তার এ কচু ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রত্যেকটির ওজন হয় ২০-৩২ কেজি। নিজস্ব ভ্যানে খুলনা শহরে নিয়ে কচু বিক্রি করেন নিউটন। তথ্যপ্রযুক্তি (ফেসবুক) ব্যবহার করেও বিক্রির কার্যক্রম প্রশারিত করেন তিনি। তার নার্সারীর চারা প্রতিবেশি দেশ ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে । কৃষি তথ্য সার্ভিসের সহায়তায় ক্ষেত থেকে কচু তুলে পরিষ্কার করে ছিলে ফেলা হচ্ছে। পরে এক হাত করে কেটে রোদে শুকাতে দেয়া হয়। তিন-চারদিন শুকানোর পর সেই কচু খুলনা শহরে এনে কোরিয়ান বায়ারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কোরিয়ায় পানি কচুর রপ্তানি হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনা।
এ ছাড়াও তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত এলাকায় পানিকচুর চারা সরবরাহ করছেন। তিনি কৃষিকাজের আয় দিয়ে একটি গরুর খামার ও পানের বরজ তৈরি করেছেন। পানি কচুর চাষ বৃদ্ধি করা হলে নিচু জমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জৈব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, নিউটন মন্ডল বেশ পরিশ্রমী একজন কৃষক। নিজ প্রচেষ্টায় তিনি কচু চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন। তিনি এলাকার কৃষকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা অন্য চাষিদের কচু চাষের ব্যাপারে উৎসাহিত করছি। নতুন করে যারা কচুর চাষ করবেন আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। আমাদের দেশে পানি কচুর বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন- লতিরাজ, নারিকেল কচু, জাত কচু, বাঁশ কচু ইত্যাদি।