Saturday , April 12 2025

২০৩০ সন নাগাদ জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আশাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)এর সহযোগিতায় ঢাকার সাভার এবং নরসিংদী পৌরসভায় গত ০৮ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত “বাংলাদেশে কুকুরের টিকাদান প্রচারাভিযানের সময় ব্যবহৃত টেকসই কলারের সামাজিক ও মহামারী সংক্রান্ত প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য একটি কেস কন্ট্রোল স্টাডি” পরিচালনা করে যা কলারের দীর্ঘমেয়াদী এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করে। এই স্টাডির অধীনে ঢাকার সাভারে ১১৪৬ টি এবং নরসিংদী পৌরসভায় ১০০৭ টি সহ ৮ দিনে পর্যায়ক্রমে মোট ২১৫৩ টি কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয় ও মাইক্রোচিপ লাগানো হয় , এবং সাভারের টিকাপ্রাপ্ত কুকুর কলার দিয়ে ও নরসিংদী পৌরসভার টিকাপ্রাপ্ত কুকুর রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্কে প্রতি বছর প্রায় ৫৯,০০০ মানুষ মারা যায় এবং বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটে জলাতঙ্কের ভাইরাস বহনকারী গৃহপালিত কুকুরের কামড়ে। জলাতঙ্ক সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের জন্যই রয়েছে কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিন। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার বেশি যার ফলে বার্ষিক প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, সুতরাং জলাতঙ্ক শুধু জীবনই নিচ্ছে না পাশাপাশি অর্থনীতিতেও ফেলছে বিরূপ প্রভাব। সংক্রমণ ঠেকাতে, কুকুরের টিকাদান প্রচারাভিযানের মাধ্যমে কমপক্ষে ৭০% টিকাদান কভারেজ নিশ্চিত করা উচিত। কিন্তু কুকুর টিকাদান প্রচারাভিযানের মূল্যায়ন বা টিকা কভারেজ নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে যেখানে বেশিরভাগই রাস্তার কুকুর।

এফএও টিসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে, রেবিস অ্যাকশন সেন্টার অফ এক্সিলেন্স (RACE) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয় ট্রাই-আউট এর মাধ্যমে ৪২ টি দলের মধ্যে সেরা ৫ টি দল বাছাই করা হয়। বিজয়ী দলের সদস্যরা ২০২১ সালে কুকুর ধরা এবং টিকা দেওয়ার উপর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পায়। সেই জ্ঞান এবং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তারা জাতীয় পর্যায়ে জলাতংক নির্মূলে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রমে (এমডিভি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পরবর্তীতে টিকা কভারেজ বাড়ানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের একটি দল জাতীয় দলগুলিকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়।

এফএও ওয়ান হেলথ সহযোগী উদ্যোগের অধীনে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, বোহরিঙ্গার ইঙ্গেলহেইম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি, এবং স্থানীয় সরকার এই কর্মসূচিতে সহায়তা করে। চারটি জাতীয় দল কুকুর ধরা, টিকা দেওয়া, মাইক্রোচিপ লাগানো, এবং অবশেষে কলার বা রং দিয়ে টিকাপ্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিত করে। এই কেস কন্ট্রোল স্টাডিতে ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন এবং কলার ব্যবহার করা হয়। টিকাপ্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিত করা ছাড়া দুই জায়গার স্টাডির মধ্যে অন্য কোনো পার্থক্য নেই: সাভারে টিকাপ্রাপ্ত কুকুর কলার দিয়ে এবং নরসিংদীতে লাইভস্টক রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। দলগুলো kobo টুলকিট এবং Talea অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করছে।

পরবর্তিতে জাতীয় দলগুলো পর্যায়ক্রমে দুইটি এলাকা পরিদর্শন করবে এবং ১১ মাস ধরে টিকা প্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি কতটা টেকসই তার উপর তথ্য সংগ্রহ করবে। কলার পরানো কুকুর সম্পর্কে কমিউনিটিতে মানুষের অভিমত বোঝার জন্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রকে নিযুক্ত করা হবে যারা এই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানাইন জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে সকল তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে এবং ফলাফল শেয়ার করা হবে।

This post has already been read 2857 times!

Check Also

অপুষ্টি শব্দটি অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে – মসিউর রহমান

বিশেষ সংবাদদাতা: ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে আমরা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে …