ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : জলবায়ূ পরিবর্তন ও ক্ষতি মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত চান খুলনা উপকূলীয় এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। একই সাথে জলবায়ূ ফান্ডের ন্যায্যতা দাবি করেন তারা।
খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ূ পবির্তন বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এ অভিমত তুলে ধরেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাওসেড শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ সভার আয়োজন করে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এতে অংশ গ্রহণ করেন।
অ্যাওসেড নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
মতবিনিময়ে অংশ নেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরগাটের মেয়র, এমপি, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
সাতক্ষীরা -২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার উপকুলীয় এলাকায়। এ থেকে উত্তরণে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে। দীর্ঘদিন সুন্দরবন বোর্ড গঠনের দাবি করছি। ভারতে এ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় রয়েছে। সুন্দরবন, উপকূল রক্ষায় সদিচ্ছা ও স্থানীয় মানুষের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।’
বাগেরহাট -৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আমিনুল আলম মিলন জলবায়ূ পরিবর্তনে বৈশ্বিক জলবায়ূ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তনে উপকূলীয় মানুষের কোন দায় না থাকলেও সবচেয়ে বেশীর ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। আগামী দিনে ভূমি ধস, লবণাক্ততা, নদী ভাঙন বড় বিপদ দেখা দিতে পারে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু খুলনা উপকূলের প্রতিনিয়ত দুযোর্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, উপকূলের প্রকৃকির ভিন্নতা রয়েছে। কোথাও নদী ভাঙছে, কোথাও ভরাট হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অভিমত ছাড়া বর্তমান প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলা সম্ভব নয়। লোকায়িত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহামান বলেন, উপকূলের সংকট নিরসনে জনপ্রতিনিধিদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। লবণের আগ্রাসন রোধে প্রথমেই খালগুলো উম্মুক্ত ও প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র নদী, খাল, পুকুর ভরাট বন্ধ করা জরুরী।
জলবায়ূ পরিবর্তনে সুন্দরবন আছে, সুন্দরী গাছ নেই উল্লেখ করেন খুলনার কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সার-কীটনাশের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে দেশীয় প্রজাতির মাছ, প্রাণ-প্রকৃতি অস্তিত হারাচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে সম্পৃক্ত করে জলবায়ূ ফাণ্ডের ব্যবহার করতে হবে।
পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু বলেন, জোয়ারের পানি উঠছে কিন্তু নামছে না। স্লুইজগেট কাজ করে না। এসব কাজে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
খুলনার চালনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাসিনা বেগম জনসচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে জলবায়ূ পরিবর্তন মোকাবেলায় ভূমিরা রাখবে বলে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু বলেন, ঢাকায় বসে পরিকল্পনা করে তৃণমূলে বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান না। নদী-খালের ন্যব্যতায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) স্থানীয় মানুষের সৃষ্টি। তাই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
দাকোপের লাউডোব ইউপি চেয়ারম্যান মো. যুবরাজ বলেন, বাঁধ দেওয়া হচ্ছে, সেটি আবারও ভাঙছে। কিন্তু মানুষের ক্ষতি কমছে না। জলবায়ূ পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার দেশের কৃষি। মাত্রারিক্ত কীটনাশক, সার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। উৎপাদন কমছে।
পাইকগাছার দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মন্ডল নিজ এলাকার ক্ষতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, লবণাক্ততা, অনাবৃষ্টি সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। কিন্তু কোন ক্ষতিপূরণই তৃণেমূলে পৌঁছায় না। ঝুঁকি ও ক্ষতির বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরূপন করা উচিত।
বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন ভয়াভয় সিডরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার সুন্দরবন নির্ভর পেশাজীবীরা। এখন তারা বনে যেতে পারেন না। কর্মহীন মানবেতর জীবন যাপন করেন। অথচ তাদের ক্ষতিপূরণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এখানে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধরা সম্পৃক্ত থাকলে পরিস্থিতি মোকাবেলা সহজ হতো।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ষাটের দশকের বেড়িবাঁধ, স্লুইজগেট উপকূলের বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। নদীর ন্যব্যতা হারিয়ে ভরাট হচ্ছে। সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের সম্বয়ক করে কাজ করতে হবে। তাহলে এই সমস্যা, জলবায়ূ পরির্তন ও ক্ষতিপূরণের ন্যয্যতা আদায় সম্ভব হবে। জলবায়ূ ন্যয্যতায় তৃণমূলের অংশগ্রহণ চান উপকূলের জনপ্রতিনিধিরা