বুধবার , ডিসেম্বর ২৫ ২০২৪

খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে কম সময়ে অধিক ফলনে গুরুত্ব দিচ্ছি -কৃষিমন্ত্রী

ফরিদপুর সংবাদদাতা: কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে ক্রমশ কৃষি জমি কমছে,  মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থায়, ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া খুবই কঠিন। সেজন্য, আমরা কম সময়ে অধিক ফলন ও একই জমি থেকে বার বার ফসল ফলানোর উপর গুরুত্বারোপ করছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা স্বল্পজীবনকালীন উন্নত জাতের ধানের ও অন্যান্য অনেক ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে, যা চাষের মাধ্যমে বছরে ০১ টি অতিরিক্ত ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে।  একইসঙ্গে,  ফলনও অনেক বেশি। এই জাতগুলোকে কৃষকের নিকট দ্রুত জনপ্রিয় করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ফরিদপুরে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৃহত্তর ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলে তেল ফসল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। পরিকল্পনার প্রথম বছরেই আমরা ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত সরিষা উৎপাদন করতে পেরেছি। আশা করছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে তেল আমদানি অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। এতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর পরীক্ষামূলক কিছু দেশীয় মডেল ঘর নির্মাণ করেছি, যেখানে ৪-৫ মাস ধরে পেঁয়াজ ভালো অবস্থায় আছে। এটি একটি কার্যকর সংরক্ষণ পদ্ধতি হবে। এবছর সারা দেশে এই সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে মাঠে পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত দেয়া হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, আর মডেল ঘরে সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না, বরং আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।

উল্লেখ্য, নতুন শস্যবিন্যাস কৃষকের নিকট জনপ্রিয় করতে দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কর্মশালা পরিচালনা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যেখানে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, কৃষক, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ অনেকে উপস্থিত থাকেন। এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী, দুই ফসলী জমিকে তিন/ চার ফসলী জমিতে রূপান্তর করে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই এ কর্মশালা।

দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট ধানের ও সরিষার জাত। এতে আমনে স্বল্পজীবনকালীন ধান চাষের পরে  স্বল্পজীবনকালীন সরিষা চাষ শেষে আবার স্বল্পজীবনকালীন বোরো ধান চাষ করা যায়। এতে সরিষার উৎপাদন অতিরিক্ত ফসল।

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন ।

এর আগে সকালে ফরিদপুর সার্কিট হাউজে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল,  আমরা তখনো কোন ভয় পাই নি। কাজেই, সকল ষড়যন্ত্র,  নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সমর্থনে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।

This post has already been read 2259 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …