ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): উপকূলীয় এলাকার দুর্যোগ পরবর্তী খাদ্য সরবরাহ ব্যাবস্থা জোরদার নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট ভিক্তিক মজুদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে খুলনায় নির্মিত হচ্ছে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার বা স্টিল সাইলো। আধুনিক এ স্টিল সাইলোতে কোন রকম কেমিক্যাল ব্যবহার ছাড়াই তিন বছর পর্যন্ত খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে। ভৈরব নদের তীরে নির্মিত মোট ৬টি স্টিল সংরক্ষণাগার (বিন) থাকবে। প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন। প্রতিটি বিনের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থাকবে, যাতে খাদ্যশস্য মজুত, সংরক্ষণ এবং সরবরাহে গতিশীলতা থাকে। স্টিলের সাইলোগুলো তিন বছর খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে এবং গুণগত মানে কোনো পরিবর্তনও আসবে না। মজুতকৃত খাদ্যশস্যে কোনো গন্ধ হবে না, পচবে না ও পোকায় ধরবে না। সাইলোতে খাদ্যশস্যে ভিটামিন মেশানো থেকে শুরু করে মজুত, সংরক্ষণ ও বিলিবণ্টনের হিসাব অটোমেটিক মেশিনে নিয়ন্ত্রিত হবে। স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজ শেষ হলে খাদ্য মজুতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
তুরুস্কের আলতুনতাস ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মেক্স (জেভি) জয়েন্ট ভেঞ্চারে প্রকল্পটি নির্মান করছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট (এমএফএসপি) প্রকল্পের আওতায় খুলনা মহনগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা সিএসডি’র গোডাউন অভ্যন্তরে ৩৫৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে সাত দশমিক ৪৪ একর জায়গার উপর এটি নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতি মধ্যে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্টিল সাইলো নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে প্রাকৃতিক দুযোর্গ পরবর্তী সময়ে সমগ্র দেশসহ এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশে কোনো বছর খাদ্যশস্য বেশি উৎপাদিত হলে খাদ্যশস্যের দাম কমে যায়। ফলে প্রন্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। ফসল বিক্রি করে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারেন না। এ স্টিল সাইলো নির্মিত হলে খাদ্যশস্য বিক্রির জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবে না। টানা তিন বছর খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে বলে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেই সুরক্ষা নয়, সস্তায় খাদ্যশস্য বিক্রি করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকেও কৃষকদের রক্ষা করা যাবে।
স্টিল সাইলো নির্মান প্রকল্পের তত্বাবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাজেদুর রহমান বলেন, সর্বাধুনিক গমের এ স্টিল সাইলোটিতে লুজ গম সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। সাইলোটিতে থাকবে ৬টি ঢোলাকৃতি বিন। প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা থাকবে ১২ হাজার ৭’শ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে আধুনিক এ খাদ্য সংরক্ষণাগারটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ৭৬ হাজার ২’শ মেট্রিক টন লুজ গম সংরক্ষণ করা যাবে। কেমিক্যাল ছাড়া এখানে রাখা গমের তিন বছর পর্যন্ত গুণগতমান ভাল থাকবে। শুধুমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমটাকে কন্ট্রোল করে গমের তাপমাত্রা সঠিক রাখা হবে। নদী, সড়ক বা রেলপথে গম আসলে গমগুলো কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে অটোমেশনে সংরক্ষণাগারে এসে প্রতিটি বিনে মজুদ হবে। এরপর লুজ গম অটো প্যাকেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে সংরক্ষণাগার থেকে বিভিন্ন জেলায় বিতরণ করা হবে। তিনি আরো জানান, এটি একটি পাইলোটিং প্রজেক্ট। দেশের আটটি অঞ্চলে এ জাতীয় ৮ টি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার বা স্টিলের সাইলো নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৬ টি চালের স্টিল সাইলো বাকী ২ টা গমের স্টিল সাইলো।
খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, খাদ্য সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি সাইলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে যেন দেশে খাদ্য সংকট না হয় সে কারণে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। খুলনাতে একটি সাইলো খুব জরুরি ছিল। এটির কাজ সম্পন্ন হলে সমগ্র দেশসহ এই অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জানা যায়, ২০১৬ সালে খাদ্য মজুতের সক্ষমতা বাড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্টিলের সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় খাদ্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট (এমএফএসপি) প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় খুলনায় একটি গম সংরক্ষণের স্টিল সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উপকুলী অঞ্চলসহ দেশের খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে খাদ্য মজুত ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের আটি কৌশলগত স্থানে স্টিলের সাইলো নির্মাণ করা। আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে— বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় খাদ্যশস্যের নিরাপদ মজুদ নিশ্চিতকরা। মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্টেও আওতায় প্রায় চার লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে মাত্র ৮০ টাকায় পারিবারিক সাইলো বিতরণ করেছে। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় অনলাইন ফুড স্টক অ্যান্ড মার্কেট মনিটরিং সিস্টেম প্রবর্তন, খাদ্যশস্যের গুণগত ও পুষ্টিমান বজায় রাখার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন এবং সর্বোপরি খাদ্য ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে গবেষণালব্ধ ফল বাস্তবায়ন।