নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব ডিম দিবস ও বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড (বিএসএসএফ) এর আয়োজনে ‘সুস্থ জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ‘সেফ ফুড ডাইজেস্ট’ এর চতুর্থ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসএসএফ সভাপতি ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলক কুমার পাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন একটি ফুল ডিম খেতাম কি না মনে পড়ে না, আমাদের সেই সুযোগও ছিল না, অর্ধেক ডিম খেতাম। কিন্তু দেশের পোলট্রি শিল্পের উন্নয়নে সেইদিন আর নেই, সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমরা এখন অনেক এগিয়েছি। আবার ডিমের দামের ব্যাপারে অন্য অনেক দেশের সাথেও আমাদের তুলনা চলে না; কারণ তাদের তুলনায় আমাদের মাথাপিছু আয় কম।
তিনি বলেন, প্রতিকেজি চাল উৎপাদনে আমাদের এতটা পানি লাগে যা কল্পনাতীত। তাই, পানি যাতে কম লাগে এমন কিছু ধানের জাত আমরা বের করতে পারি, তবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমরা ধরে রাখতে পারবো। ধান উৎপাদনে পানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যায় করতে হয়; তাতে করে তারা দিনকে দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। পানির ক্রাইসিস অটোমেটিক্যালী চলে আসছে, তা্ই স্বল্প পানি খরচ করে কীভাবে বেশি ফসল উৎপাদন করা যায় সেদিকে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
ড. অলক কুমার পাল আরো বলেন, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যের ক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান সবগুলো ঠিক আছে কি না, সেগুলো আমাদের দেখতে হবে। অন্যদিকে খাদ্যে প্লাস্টিক থেকে শুরু করে অন্যন্য হেভি মেটালের উপস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
সেমিনারে কী নোট স্পীকার ছিলেন যথাক্রমে ড. এবিএম খালেদুজ্জামান, পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ও ড. মো. হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
ড. খালেদুজ্জামান বলেন, ফার্মগুলোতে আমরা সার্টিফিকেশন প্রসেসে যাচ্ছি। এতদিন শুধু আমরা খামারিদের বলেছি ফার্ম করেন, নিবন্ধন নেন; কিন্তু এখন আমরা তাদেরকে সঠিকভাবে গাইড করবো যাতে করে, তাদেরকে আমরা সার্টিফাই করতে পারি। যেটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মুরগি ও ডিম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন – আমি মনে করি, ডিমই একমাত্র সুপার ফুড যেটিকে আমরা এখনো সহনীয় পর্যায়ে মানুষকে দিতে পারছি। কারণ, একটি বাদামী রঙের ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা এবং সাদা ডিমের খরচ পড়ে ৯.৬২ টাকা। এটির সাথে বোঝাই, খালাস ও পরিবহন খরচ যোগ করে আমরা (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিটি ডিমের ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ১২ টাকা প্রস্তাব করেছি।
“আমি কেন বলছি যে ডিমের দাম এখনো পর্যন্ত একটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, গত বিগত বছরে কাঁচামরিচ, আদাসহ কৃষির প্রত্যেকটি পণ্যের দাম ডিমের চেয়ে বেশি বেড়েছে! ডিম বা মুরগিই যাই বলেন, সেগুলো উৎপাদন খরচের ৭০-৭৫ শতাংশ চলে যায় খাদ্য (ফিড) খরচ বাবদ। বিগত এক বছরে ফিড তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সেই তুলনায় ডিমের দাম এখনো পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে “ যোগ করেন ড. খালেদুজ্জামান ।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার ও মেরিন সাইন্স (ফ্যাকাল্টি অব ফিসারি) বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এম শাহাবুদ্দিন এবং কৃষি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. জাফর উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার অর্গানাইজিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজেদা সুলতানা এবং ভোট অব থ্যাংকস জানান অর্গানাইজিং কমিটির কো-কনভেনার এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. কেএইচএম নাজমুল হোসাইন নাজির।
সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড (বিএসএসএফ) এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান।
এছাড়াও সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।