বৃহস্পতিবার , জানুয়ারি ২ ২০২৫

আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে জ্বালানি খাতে মানবাধিকার লঙ্গন বন্ধ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির মালিকানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দাবিতে “মানব প্রদর্শন” অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: জাপানীর অধিকার সর্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশহলেও সে অধিকার নিশ্চিত করতে অনেকের আবার জীবন জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। নানাকারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, তাপপ্রবাহ, খরা, মরুকরণ, সুপেয় পানির সংকট এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় সংক্রামক রোগের বিস্তারেকে জলবায়ুু পরিবর্তনের কিছু বিরূপ প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সারা বিশ্বে মানবাধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে জীবন জীবিকার অধিকার, নিরাপদ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংস্কৃতি, কাজ এবং উন্নয়ন। শনিবার (০৯ ডিসেম্বর) আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৩ উৎযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সিআরবি চত্ত¡রে জ্বালানী খাতে মানবাধিকার লঙ্গন বন্ধ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির মালিকানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দাবিতে অনুষ্ঠিত “মানব প্রদর্শন” অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব যুব গ্রুপ, বিডাব্লুজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্লীন (কোষ্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভার্মেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) যৌথ আয়োজনে মানবাধিকার দিবসে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে কর্মসুচিতে সংহতি জানান আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব পাহাড়তলী থানা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের তানিয়া সুলতানা, মোহাম্দ রায়হান, নিলয় বিশ্বাস, আবরারুল করিম নেহাল প্রমুখ।

বক্তাগন বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিবেশে ধ্বংস করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে জমিঅধিগ্রহনে স্থানীয় জনগোষ্ঠি যেরকম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, একইভাবে কর্মরত শ্রমিকেরাও নানান ভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধিগ্রহনে স্থানীয় জমির মালিকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। বে-আইনী জমি অধিগ্রহণের কারণে অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন এবং অনেক কৃষক এবং মৎস্যজীবীসহ অনেকেই তাদের পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন। যা সুষ্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বক্তাগন অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরে শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্গনের বড় দৃষ্টান্ত হলো চট্টগ্রামের বাঁশখালির বিদ্যুৎকেন্দ্র। এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো ও এইচটিজি গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মপরিবেশ একেবারেই অনূকুল নয়। নিজেদের সুরক্ষা সরঞ্জাম বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে হয়, স্থানীয় শ্রমিকদের যেকোনো দূর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলেও শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বক্তারা আরও বলেন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫০.৪% নারী গৃহকর্ম এবং কৃষিতে নিয়োজিত। স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী, নারীরা রান্না-বান্না, শিশু এবং পরিবারের সদস্যদের যতেœ সরাসরি নিযুক্ত থাকেন। তারা পরিবারের প্রয়োজনেই সর্বোচ্চ পরিমাণ জ্বালানী ব্যবহার করেন। কিন্তু জ্বালানী পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং বিতরণ কোথাওই তাদের অংশগ্রহণ নেই। মাত্র ২%-৪% হিসাবে জমির মালিকানা নারীদের হাতে থাকায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকনায় নারীদের উপস্থিতি, তথ্য অধিকার এবং পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণকে উপেক্ষিত। সুত্রানুযায়ী দেশের জীবাশ্ম জ্বালানির কোম্পানিগুলোতে মাত্র ৮.৩% শ্রমিক নারী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে আছেন মাত্র ০.৯৩% নারী।

বক্তারা কৃষিজমি বা বাস্তভিটায় আর কোন জ্বালানি প্রকল্প গ্রহন করা যাবে না, সাধারণ মানুষকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না, অধিগ্রহণকৃতদের জায়গায় গৃহিত প্রকল্পের লভ্যাংশ তাদেরকে নিয়মিত দিতে হবে, বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্মাণের পূর্বেই স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ও তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়ন করে তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না, নারী অধিকার রক্ষায়, যে-কোন জ্বালানি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারী সদস্য মনোনীত করতে হবে, দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভূমি ইজারা নিতে হবে এবং জমির বার্ষিক ভাড়া প্রদানের সুষ্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং কৃষিভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্থায়ন করার দাবি জানান।

This post has already been read 2131 times!

Check Also

Future of Feed Formulation demands Innovation & Sustainable Practices

Staff Correspondent: Innovative and cost-effective feed formulation is essential for ensuring the sustainability and profitability …