রাজশাহী জেলার কৃষকরা বিপ্লব জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফল হয়েছেন। পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। পেঁয়াজের সংকট মিটাতে ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে এ জাতটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন কৃষকরা।
ইষ্ট ওয়েষ্ট সীড ও এসিআই সীড যৌথ উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগীতায় রাজশাহী জেলার ১১টি উপজেলায় বিপ্লব জাতের পেঁয়াজ আবাদে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং আদর্শ কৃষকগণ পরীক্ষামূলকভাবে জুলাই-আগস্ট মাসে বীজতলা তৈরির মাধ্যমে এ জাতের চাষাবাদ শুরু করেন।
ইষ্ট ওয়েষ্ট সীড ও এসিআই সীড গত ৩ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযোজন পরীক্ষার মাধ্যমে “বিপ্লব” নামে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গ্রীষ্মকালীন একটি পেঁয়াজের জাত নির্বাচন করে, যার হেক্টর প্রতি ফলন ৩০-৩২ মেট্রিক টন। বিপ্লব জাত এ কন্দের গড় ওজন- ১০০-১৫০ গ্রাম, যাতে এক কন্দ বিশিষ্ট পেঁয়াজের পরিমান – ৯০% এর বেশি, পেঁয়াজ ফাটে না এবং ২-৩ মাস সংরক্ষণ করা যায়। “বিপ্লব” উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টি সহনশীল জাত, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। জাতটি চারা রোপণের ১০০-১১০ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। এটি রোগবালাই সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল একটি জাত; যা চাষ করলে একদিকে কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোও সম্ভব হবে।
রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার আক্কেলপুর গ্রামের কৃষক মো: আবুল হোসেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে এ বছর ১৬ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ – বিপ্লব চাষ করেন। এতে তার খরচ হয় ৩২ হাজার টাকা এবং ফলন হয় প্রায় ৫০ মণ, যা তিনি ১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন। জনাব আবুল হোসেন বলেন, তার গ্রামে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হতো না। কিন্তু এবার বিপ্লব জাতের ফলন ও বাজারে পেঁয়াজের দাম দেখে তার মতো অনেকেই আগামী মৌসুমে বিপ্লব জাত চাষ করবেন।
বাগমারা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জনাব আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ খুবই লাভজনক। বিপ্লব জাত চাষ করে কৃষকগণ বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ১০০-১২০ মণ ফলন পাচ্ছে এবং বাজারে বিক্রয় করে ভালো দামও পাচ্ছে। ফলে আগামীতে এ উপজেলায় এ জাতের আবাদ অনেক বেড়ে যাবে।
জেলা কৃষি দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সালমা ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে বীজ বপন করে কৃষক নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারছে। অন্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় কৃষক অধিক লাভবান হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন বলেন, সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, যা বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশ পর্যায়ক্রমে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বিপ্লব জাতের পেঁয়াজ খরিফ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে অনেকটাই সুফল বয়ে আনবে ও আমদানি নির্ভরতা কমাবে এবং দেশে পেঁয়াজ সংকট সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।