ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আন্ত ফসল হিসাবে একই জমিতে এক সঙ্গে ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ করেছেন কৃষক। ডুমুরিয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে একই জমিতে এক সঙ্গে ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভুট্টার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি শাকসবজি যেমন-লালশাক, ডাঁটা শাক, পালং শাক, মুগ শাক, সরিষা শাক, খেসারি শাক, ধনিয়া ইত্যাদি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষকরা। দুটি ভুট্টা গাছের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে এসব শাকসবজি আবাদ করা হচ্ছে। এতে স্বল্প খরচ ও সময়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আমির হামজা ১৬ শতাংশ মোঃ গোলাম রসুল ১২শতক, মোঃ ইউসুফ আলী ৬শতখ জমিতে আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করেছেন তারা বলেন, একই জমিতে আন্তঃফসল হিসেবে ভুট্টা, লালশাক, ধনিয়া, মুলা উৎপাদন করছেন। ইতিমধ্যে জমি থেকে কয়েক দফা লালশাক এবং ধনিয়া বিক্রয় করেছেন। তার মতে, এটি আর্থিকভাবে বেশ লাভজনক চাষাবাদ।
উপজেলা কৃষি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ করুণা মন্ডল বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় দুই গাছের মধ্যবর্তী স্থানে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সহজেই বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি শাকসবজি চাষ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে কৃষকের বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব হবে। এজন্য অতিরিক্ত কোনো সারেরও প্রয়োজন নেই। ডুমুরিয়ায় উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়। এই পদ্ধতিটি কৃষকদের মধ্যে আন্তঃফসলচাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় অধিক লাভবান হয়েছেন। এ কারণে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অনেক কৃষক তাদের জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টা সহ আন্ত ফসল হিসাবে সরিষা ও বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছেন। এছাড়াও ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোতিা করছে কৃষি বিভাগ। তিনি আরো জানান নদীবেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবৎ আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টাচাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো- খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন। চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। তারা এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক কৃষক ভুট্টার জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শীতকালীন শাক-সবজিরও আবাদ করেছেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ভুট্টার সাথে সরিষা ও সবজির এক খন্ড জমিতে একই সাথে কোন প্রধান ফসলের পাশাপাশি স্বল্পসময়ের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে দুই বা ততোধিক ফসল চাষের পদ্ধতিকে সাথী ফসল চাষ বলা হয় এবং অতিরিক্ত ফসলটিকে বলা হয় সাথী ফসল। ভূট্টা সাথে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা ও সবজির চাষের প্রধান উদ্দেশ্য হলো একই সাথে একই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা।