ড. মো. সহিদুল ইসলাম খান : উপকূলীয় অঞ্চলে তেল ফসল চাষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমবর্ধমানভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। সরিষা ও তিল উপকূলীয় অঞ্চলের প্রচলিত তেল ফসল হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে বৈরি আবহাওয়া, বিলম্বে আমন কর্তন, জমিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা, মাটি-পানির লবনাক্ততা ইত্যাদি কারনে যথাসময়ে বীজ বপন করতে না পাড়ায় দিন দিন সরিষার আবাদ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আগাম বৃষ্টিপাতের কারনে তিল পরিপক্ক পর্যায়ে এসে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দক্ষিনাঞ্চলে আবহাওয়া ও পরিবর্তনশীল উপকূলীয় পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন তেল ফসল প্রচলন করা দরকার। সম্প্রতি উপকূলীয় অঞ্চলে সূর্যমুখী একটি নতুন অভিযোজিত তেল ফসল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিলম্বে আমন ধান কর্তন পরবর্তী সময়েও সূর্যমুখী বপন করা যায়। তাই উপকূলীয় অঞ্চলে সূর্যমুখীর চাষ তেণ ফসলের একটি উপযুক্ত বিকল্প। উপকূলীয় আঞ্চলে রিলে খেসারি/ফেলন-পতিত-রোপা আমন একটি প্রচলিত শস্য বিন্যাস। কিন্তু খেসারি/ফেলনের গজানো/প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টি পাতের কারনে আংশিক বা সম্পূর্নরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। যেহেতু উপকূলীয় অঞ্চলে সূর্যমুখী বিলম্ব রবি পর্যন্ত বপন করা যায় তাই বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ খেসারি/ফেলন এর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। এভাবে উপকূলীয় কৃষকরা সূর্যমুখী ভিত্তিক বিকল্প শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে প্রচলিত শস্য বিন্যাস অপেক্ষা অধিক পরিমানে আয় করতে সক্ষম হবেন।
প্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী অঞ্চল : কৃষি পরিবেশ অঞ্চল -১১ ও ১৮ এর মাঝারী উঁচু জমি
প্রযুক্তি ব্যবহারের তথ্য
বিষয় | ফসল বিন্যাসের বিবরণ | ||||
ফসল | সূর্যমুখী | রোপা আউশ | আমন ধান | ||
জাত | বারি সূর্যমুখী-২ | ব্রি-ধান ৪৮ | ব্রি-ধান ৫২ | ||
বপন/রোপণ দূরত্ব সেমি) | ৫০ সেমি x ২৫সেমি | ২০ সেমি ী ১৫সেমি | ২৫ সেমি x ১৫সেমি | ||
বপন/রোপনের সময় | ডিসেম্বর এর ২য় সপ্তাহ থেকে জানুয়ারীর ২য় সপ্তাহ | জুনের ১ম সপ্তাহ | সেপ্টেম্বর এর ১ম সপ্তাহ | ||
সারের মাত্রা (কেজি/হেঃ) ও প্রয়োগ পদ্ধতি | |||||
ইউরিয়া | ১৯৫ | ১৫০ | ১৭৫ | ||
টিএসপি | ১৫০ | ৯০ | ১৪০ | ||
এমওপি | ১৫০ | ৭২ | ৯০ | ||
জিপসাম | ১৬৫ | ৫৫ | ৬০ | ||
জিংকসালফেট | ১০ | ১৫ | ১৬ | ||
বরিক এসিড | ১০ | ০ | ৬ | ||
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | অর্ধেক ইউরিয়া এবং বাকি সকল সারের সবটুকু বীজ বপনের পূর্বে শেষ চাষের সময জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া গাছে ফুল আসার পূর্বে (বপনের ৪৫-৫০ দিন পর দ্বিতীয় সেচের পরপরই) পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। | ইউরিয়া ছাড়া সকল সার জমি প্রস্তুতের সময় এবং ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫ ও ৪৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। | ইউরিয়া ছাড়া সকল সার জমি প্রস্তুতের সময় এবং ইউরিয়া সমান তিন কিস্তিতে চারা রোপণের ১৫, ৩০ ও ৪৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। | ||
ফসলের আন্তঃপরিচর্যা | |||||
সেচ প্রয়োগ ও নিকাশ | জমির তারতম্যভেদে রবি মৌসুমে এক থেকে দুই বার সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ বপনের ৩০ দিন পর (গাছে ফুল আসার আগে), দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫০ দিন পর (পুষ্পস্তবক তৈরির সময়) দিতে হবে। জমি থেকে সেচের কিংবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। | চারা রোপন পরবর্তী সময়ে অনাবৃষ্টি বা খড়া দেখা দিলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। | অতিবৃষ্টি কিংবা উচ্চ জোয়ারের কারনে গাছ তলিয়ে গেলে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হব্।ে | ||
রোগ-পোকা দমন | জমি অতিরিক্ত ভিজা কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে ফোমা বøাক স্টেম বা কান্ড কালো রোগ ও শিকড় পচাঁ রোগ দেখা দেয়। জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করে এবং আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে ও প্রয়োজনে ফোমা বøাক স্টেম বা কান্ড কালো রোগের ক্ষেত্রে ক্যাবরিও টপ (৩% হারে) এবং শিকড় পচাঁ রোগের ক্ষেত্রে প্রোভ্যাক্স ২০০ডাবিøউপি/অটোস্টিন ৫০ডাবিøউডিজি (২% হারে) ছত্রাক নাশক স্প্রে করে এ রোগ দমন করতে হবে। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে সূর্যমুখীর বিছা পোকা, পাতা ও মাথা ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য নাইট্রো ৫৫০ইসি (২% হারে) কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এবং পরিপক্ক পর্যায়ে টিয়াপাখী তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। | রোগ/পোকা এর আক্রমনের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে | |||
ফসল সংগ্রহ ও প্রযুক্তি হতে ফলন/প্রাপ্তি | |||||
ফসল সংগ্রহের সময়কাল | এপ্রিলের ২য়-৩য় সপ্তাহ | সেপ্টেম্বর এর ১ম সপ্তাহ | ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ | ||
জীবন কাল | ৯০-১০০ দিন | ৯৫-১০০ দিন | ১০৫-১১০ দিন | ||
ফলন (টন/হেঃ) | ১.৮১ | ৪.০২ | ৪.৬৪ | ||
লাভ-ক্ষতির বিবরণ | মোট আয় : ২৬৭৫২০ টাকা/হেক্টর | ||||
লেখক: মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই, পটুয়াখালী।