নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মন্ত্রী হতে রাজনীতিতে আসিনি। সরকারি চাকরি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালোবেসে রাজনীতিতে এসেছিলাম। প্রথম যখন এমপি নির্বাচন করি, তখন পরিবারের কেউ রাজি ছিলনা।
তিনি বলেন, এরপর থেকে একটানা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আজকের এ পর্যায়ে এসেছি। সর্বদা সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা ছিল। ১৯৬৪ সালে স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন টাঙ্গাইলের গোপালপুরে প্রথম বঙ্গবন্ধুকে দেখে, তাঁর বক্তব্য শুনে আমার শিরা-উপশিরায় যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছিল তা আজও আমার ধমনীতে বহমান। সেই শক্তি নিয়ে আমি রাজনীতি করি। তাই আগেও যেভাবে কৃষির সঙ্গে ছিলাম, এখনো সেভাবে কৃষির সঙ্গে থাকবো।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কৃষিবিদ দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাকৃবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিগত নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. রাজ্জাক বলেন, একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তারপরও এখনো নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যত সুন্দর নির্বাচন হয়েছে আমেরিকাতেও এত ভালো হয়না। আমেরিকাতে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে না, তারা তো একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ইউরোপেও এমন নির্বাচন হয় না।
এদিকে ওই অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল পেশী শক্তি দিয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন দখল করে রেখেছে। ছয় বছর ধরে তারা নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে দেয়নি। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বর্তমান কৃষিবিদের নেতৃত্বকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে, তারপরও তারা ক্ষমতা ছাড়ছে না।
তিনি বলেন, দ্রুত এ সংগঠনের নির্বাচন হওয়া দরকার। আদালত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটা ঠিকভাবে পালন করা প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, এই পেশীশক্তিধারীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, এখন তাদের বিবেক কাজ করবে। তারা অতি শীঘ্রই একটা নির্বাচন দেবে এবং কৃষিবিদদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে।
এদিকে ওই অনুষ্ঠানে বাকৃবি সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, কৃষিবিদের মধ্যে আজ বিভেদ। কিন্তু ১৯৭৩ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবসের সূচনা বঙ্গবন্ধু করেছেন বাকৃবিতে। যার পরে এই কৃষিবিদ দিবস শুরু হলো। তাই এই দিবসের সঙ্গে বাকৃবি স্মৃতি জড়িত। নানা সংগঠন থাকতে পারে নানা দলমত থাকতে পারে, তবে কৃষিবিদদের উন্নয়নে, দেশের কৃষির উন্নয়নে সকলকে ঐকমত্য হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছর কৃষিখাতে যে গবেষণা, যেমন বিনিয়োগ শুরু হয়েছিলো এখন তার ধারা অব্যাহত রাখা দরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা আব্দুর রাজ্জাককে পেয়েছি। আশা করি তিনি সর্বদা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। কৃষির সঙ্গে থাকবেন।
বাকৃবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমতুল্লাহ বলেন, কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণী প্রদান কিন্তু একদিনে হয়নি। এই কৃষিবিদ দিবস সহজভাবে আসেনি। এরজন্য অনেক সংগ্রাম হয়েছে, অনেক কাজ করতে হয়েছে। এতে অনেকের অবদান রয়েছে। যা কারো একক নয়।
তিনি বলেন, আমি অনেক আগে থেকে কৃষিবিদের এক করার চেষ্টা করছি। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সকলে থাকবে, ওটা আমাদের ঠিকানা। এর ভেতরে কোন বিভেদ থাকা ঠিক নয়। আশা করি ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হবে। সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।
ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য, কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিগুণ থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছে। এই উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশ আরও অনেক এগিয়ে যাবে।
সবেক সিনিয়র সচিব আব্দুস সামাদ ফারুক বলেন, এ রাষ্ট্র বোঝে যে আব্দুর রাজ্জাক এ দেশের কৃষির জন্য কি গুরুত্ব রাখেছেন। তিনি গত কয়েক বছরে কৃষির যতো বৈচিত্র্যকরণ করেছেন, সেটা বড় বিস্ময়। যে ভিত বঙ্গবন্ধু রচনা করে গিয়েছিলেন তা এগিয়ে নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি কৃষিপণ্য রফতানির জন্য উৎপাদন, মানোন্নয়ন ও বিপণনের বড় ব্যবস্থা করেছেন, যার উপকার আমরা পাচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের যথাযথ নেতৃত্বে বিগত কয়েক বছর কৃষির প্রচুর সমৃদ্ধি হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বড় সাফল্য আমরা দেখেছি। খাদ্যের কোন সংকট হয়নি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সবেক সিনিয়র সচিব আব্দুস সামাদ ফারুক, ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।